খেলাফত তথা ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম হলে সব সাংবাদিককে জবাই করার ঘোষণা দেওয়া আটক কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানীকে এক দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক এ কে এম রওশন জাহান এ আদেশ দেন।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার জানান, ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানীর বিরুদ্ধে এসআই মাহবুব বাদী হয়ে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। এ ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা করেন সাংবাদিক রাকিবুল ইসলাম শাহিন। ওসি বলেন, ‘আজ তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে তোলা হলে আদালত তাকে এক দিনের রিমান্ড আদেশ দিয়েছেন।’ এর আগে গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টায় তাকে আটকের খবর নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় ইস্যুকে পুঁজি করে বেশ কয়েকটি উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করেছেন, যা ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করাসহ সাধারণ মানুষকে ভিন্ন পথে ধাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় ইস্যুকে পুঁজি করে ওয়াসেক বিল্লাহর উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করার কয়েকটি ভিডিও আমাদের নজরে এসেছে। তিনি বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছেন। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এর আগে বিকেল ৫টার দিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়ার এসএ সরকার রোডের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তার আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফেসবুকে এসবি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘নতুন কিছুর ঝাল বেশিই থাকে। তিনি একজন নব্য মুসলিম। তিনি এখন পুলিশ হেফাজতে।’

মাওলানা নোমানীর উগ্র আক্রমণাত্মক বক্তব্যের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানী উগ্র কণ্ঠে বলছেন, ‘খেলাফত তথা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম হলে সব সাংবাদিককে ধরে ধরে জবাই করা হবে। দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠায় অনেক রক্ত দেওয়া হয়ে গেছে। এখন আর রক্ত দেবো না।’ এখন থেকে রক্ত নেওয়া হবে বলে লাফিয়ে ওঠেন।

৩ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে নোমানী আরও বলেন, ‘আল্লাহ যদি আমাদের তৌফিক দেয়, আর যদি ইনশাআল্লাহ খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে পারি; যদি আল্লাহ তৌফিক দেয় আর যদি ইনশাল্লাহ খেলাফত কায়েম করতে পারি, আল্লাহর কসম, আল্লাহর কসম, সংবাদ দেখার টাইম পাবি না। সংবাদ দেখার টাইম পাবি না। একটা একটা ধরব আর জবাই করব ইনশাআল্লাহ। যতদিন বাঁচব, বাঘের মতো বাঁচব। আর যদি মরতে হয় ইনশাআল্লাহ দুই চার দশটাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে এরপর মরব। সবাই রাজি আছি তো ইনশাআল্লাহ।’ এদিকে, মাহফিলটি কবে কোথায় হয়েছিল, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও তার নাম, পরিচয় ও ঠিকানা পাওয়া যায়।

মাওলানা নোমানী হেফাজতের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন। তবে জেলায় সংগঠনটির কোনো কমিটি নেই বলে জানিয়েছেন কওমি আশের মাওলানা শরীফ উদ্দিন। একই কথা বলেছেন মাওলানা নোমানীর মাদ্রাসার মোহতামিম আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ময়মনসিংহে তো হেফাজতের কোনো কমিটি নেই। তিনি হেফাজতের কোনো নেতা না আমার জানামতে।’

অপরদিকে গতকাল রোববার সানকিপাড়ায় নোমানীর বাসায় তার খোঁজ নিতে গেলে তার স্ত্রী বাড়ির ভেতর থেকে বলেন, ‘কারা জানি আসছিল, তাদের সাথে গেছে। আমি পর্দা করি, বাইরের কারও সাথে কথা বলি না।’

ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানী ২০১২ সালে হিন্দু ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হন। তিনি ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়ার ফজলুল হক মারকাযুল উল্লুম মাদ্রাসায় বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে পড়ান তিনি। নোমানী খাইরুল উম্মাহ নামে একটি সমাজসেবী সংগঠনের ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদেও আছেন। তার বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায়।