লালমনিরহাট জেলায় মানুষের প্রধান অর্থকারী ফসল হলো ভুট্টা চাষাবাদ। জেলা থেকে দেশে ভুট্টার চাহিদা সিংহভাগ পুরণ হয়। কোন প্রকৃতি দুর্যোগ না হলে এ বছর জেলায় ভুট্টা চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে যাবে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ফলনও ভালো হবে। ইতোমধ্যে চর এলাকাগুলোতে ভুট্টা তোলা শুরু হয়েছে।
প্রতিবিঘা ভুট্টা ক্ষেতের পাতা ও গাছের মাথা কাটতে ২ জন করে শ্রমিক লাগলেও নিম্ন আয়ের মানুষজন তা বিনামূল্যে করে দিচ্ছে। তারা ভুট্টা গাছের পাতা ছিঁড়ে ও মাথা কেটে নিয়ে হাট বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। লাভবান হচ্ছে ভুট্টা চাষিরা আর জীবিকা নির্বাহ করে সংসারের অভাব দূর করছেন কর্মহীন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া দিনমজুরেরা।

অপরদিকে দামে কম হওয়ায় গো-খাদ্য হিসেবে অনেকেই ভূট্টার পাতা কিনে নিচ্ছে। বাজারে এর চাহিদাও প্রচুর। এতে একদিকে নিম্ন আয়ের মানুষজনের আয় হচ্ছে, অন্যদিকে কম দামে বিভিন্ন গবাদিপশু খামারিরা পশুর খাদ্য পাচ্ছে ও কৃষকদের ভুট্টা উৎপাদনে খরচও কমে যাচ্ছে।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, হাতীবান্ধা উপজেলার হাতীবান্ধাহাট, পারুলিয়াহাট, সানিয়াজান বাজার, বড়খাতা, ঘুন্টিবাজার, কালীগঞ্জ উপজেলার ভুল্ল্যারহাট, ভোটমারীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ভুট্টা পাতার হাট বসছে।

উপজেলার ভোটমারী এলাকার দিনমজুর কোনা মিয়া বলেন, বর্তমানে এলাকায় কোনো কাজ নেই। অভাব অনাটনের মাঝে দিন কাটাচ্ছি। তার উপরে লকডাউন। ফলে স্ত্রীসহ প্রতিদিন সকালে ডাউয়াবাড়ীর চরে গিয়ে ভুট্টা পাতা ছিঁড়ে ভোটমারী বাজারে বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন ২৫০থেকে ৩’শ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এ দিয়ে কোনো রকম সংসার চলছে। পাতার জন্য ক্ষেত মালিকদের কোনো টাকা দিতে হয় না। কয়েকদিন পর ভুট্টা তোলা শুরু হলে তখন ভুট্টা তোলার কাজ করবো।

ভোটমারী বাজার ঘুড়ে দেখা যায় সাদেকুল নামে এক দিনমজুরের ছেলে যার এখন খেলা-ধুলা করার কথা কিন্তু তার বাবা মা সংসার চালাতে হিমসিম খাওয়ায় বাজারে ভুট্টার পাতা বিক্রি করছে। বাজারে ভূট্টা পাতা বিক্রি করতে আসা সজীব বলেন, আমি ভোটমারী স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পরি, অভাবের সংসার বাবা মাসহ সারাদিন ভূট্টা গাছের পাতা ছিড়ে স্কুল বন্ধ থাকায় বিকালে ভূট্টা পাতা নিয়ে বাজারে এসে সেটি বিক্রি করি।

হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তার চর এলাকার কৃষক লুৎফর রহমান জানান, ভুট্টা তোলার ১৫/২০ দিন আগে গাছের পাতা ও মাথা কেটে দিতে হয়। এতে ভুট্টায় সূর্যের আলো পড়লে ভুট্টার রং ভালো হয়। প্রতিবিঘা ভুট্টা ক্ষেতে পাতা ও মাথা কাটতে ২ জন করে শ্রমিক লাগে। কিন্তু এখন তা লাগছে না। অনেকেই পাতা ও গাছের মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে আমাদের উৎপাদন খরচ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের লোকজন তাদের জীবিকা চলার পথ পেয়েছে।

ডাউয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রেজ্জাকুল ইসলাম কায়েদ জানান, এ সময়টা কাজ না থাকায় চর অঞ্চলের নিম্ন আয়ের লোকজন বেকার হয়ে পড়ে। কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে- ভুট্টার পাতা ও ভুট্টা গাছের মাথা বিক্রি হচ্ছে। ফলে কিছু লোকজন কয়েক দিনের জন্য হলেও তাদের কর্মসংস্থান পায়। অন্যদিকে ভুট্টা উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার পাশাপাশি পশু খামারিরা কম দামে তাদের গো-খাদ্য কিনতে পারছে।