বিতর্কিত ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীকে আবারো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বৃহষ্পতিবার দুপুরে গাজীপুরস্থ কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জিএমপি’র বাসন থানায় নেওয়া হয়েছে। এর আগে জিএমপি’র গাছা থানার অপর একটি মামলায় গত রবিবার দুইদিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারগার-২ এর জেলার মোঃ আবু সায়েম জানান, ‘শিশু বক্তা’ হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে একটি মামলায় দুইদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বাসন থানায় নেওয়া হয়েছে। বৃহষ্পতিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে তাকে প্রলিশের প্রহরায় এ কারাগার থেকে বাসন থানায় নেওয়া হয়। গত ১১ এপ্রিল বাসন থানায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা দায়ের করা হয়। এর আগে জিএমপি’র গাছা থানায় গত ৮ এপ্রিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত অপর একটি মামলায় গত রবিবার দুইদিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে তাকে এ কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়।

জিএমপি’র বাসন থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুল ফারুক জানান, গত ১১ এপ্রিল কথিত ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে বাসন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টেকনগর পাড়া এলাকার কফিল উদ্দিনের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি এ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭দিনের রিমান্ড চেয়ে গত ১৮ এপ্রিল আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ সাখাওয়াত হোসেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শেখ নাজমুন নাহার রিমান্ড শুনানীর ধার্য্য তারিখ বুধবার (২১ এপ্রিল) ভার্চুয়ালী শুনানী গ্রহণ করেন। শুনানী শেষে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক। এরপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহষ্পতিবার দুপুরে তাকে কারাগার থেকে থানায় আনা হয়েছে।

বাসন থানার ওসি আরো জানান, বাদী মামলায় মাদানীর বিরুদ্ধে ওয়াজ মাহফিলের নামে ধর্মীয় বক্তব্যের আড়ালে রাষ্ট্র বিরোধী বক্তব্য প্রদান করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অভিযোগ করেন। এতে তার বিরুদ্ধে মারাত্মক মিথ্যা, ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্মীয় অনুভ’তিতে আঘাত, মানহানিকর তথ্য প্রকাশ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার মতো অপরাধে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে। রফিকুল ইসলাম মাদানী অপরাপর ব্যক্তিদের সহায়তার সরাসরি সশস্ত্র জিহাদের ডাক দেন, এবং এক্ষুনি জিহাদের উপযুক্ত সময় বলে সবাইকে জিহাদে অংশ গ্রহণের আহবান জানান। সংবিধান পরিপন্থী, রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল এ ধরনের জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে উস্কানির ভিডিও চিত্র ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়। তার ওই বক্তব্যে সশস্ত্র জিহাদের আহবান রয়েছে বলে বাসন থানার মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতের সহকারি কমিশনার শুভাশীষ ধর আরো জানান, গত ৭এপ্রিল ভোররাতে ‘শিশু বক্তা’ হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে (২৬) নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার লেটিরকান্দা এলাকার বাড়ি থেকে আটক করে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। তিনি ওই এলাকার মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে। ওই দিন রাতেই গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানায় তাকে হস্তান্তর করা হয়। ৮ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন র‌্যাব-১ এর নায়েব সুবেদার (ডিএডি) মোঃ আব্দুল খালেক। এরপর গত ১১ এপ্রিল বাসন থানায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপর একটি মামলা দায়ের করা হয়।

জিএমপি’র গাছা থানার ওসি ইসমাইল হোসেন জানান, ‘শিশু বক্তা’ হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে (২৬) গ্রেফতারকালে তার কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। তিনি এসব মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। এছাড়াও জব্দকৃত মোবাইল ফোনে আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ ‘এডাল্ট কনটেন্ট’ অশ্লীল ভিডিও চিত্রসহ পর্নোগ্রাফি পাওয়া গেছে। এসব এডাল্ট ছবি ও ভিডিও তিনি নিয়মিত দেখতেন এবং সেগুলো স্টোর করতেন ও লিংক দিতেন। এজন্য রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ থানায় রুজুকৃত মামলায় পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ৮(৫)(ক) ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এ মামলায় গত রবিবার দুইদিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

প্রসঙ্গতঃ, কথিত ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানী বিভিন্ন মাহফিলে রাষ্ট্র তথা সরকার বিরোধী ও আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থী উস্কানী ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ডিজিটাল মাধ্যমে প্রদান করেন। যা তার নির্দেশে ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। রফিকুল ইসলাম মাদানীর উস্কানীমূলক বক্তব্যের কারনে তার অনুসারীরা গত ২৬ মার্চ ঢাকা বায়তুল মোকাররম মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা করে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুন্ন করা, জনমনে আতংক সৃষ্টি, সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘœ ঘটানো, আইন শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুতাসহ সরকারের প্রতি ঘৃণারভাব সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে দেশের সরল ও ধর্মানুরাগী মানুষের ধর্মীয় মুল্যবোধ ও ধর্মী অনুভুতিতে আঘাত করে বক্তব্য প্রদান করেন, যা ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তিনি জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে উস্কানির ভিডিও চিত্র ফেসবুক, ইন্টারনেট ও ইউটিউবের বিভিন্ন চ্যানেল ও পেজে আপলোডের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন বলে দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয়।
###