বিতর্কিত ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদকালে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এর আগেও তাকে গাছা থানার অপর একটি মামলায় দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিএমপি’র বাসন থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুল ফারুক জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বাসন থানার একটি মামলায় গ্রেফতারকৃত বিতর্কিত ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত বৃহষ্পতিবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে থানায় আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদকালে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশ করে তথ্য দিয়েছেন। তার দেওয়া তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শনিবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেলার আবু সায়েম জানান, গ্রেফতারকৃত ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীকে বাসন থানায় দায়েরকৃত একটি মামলার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শনিবার দুপুর পৌণে একটার দিকে আদালতের মাধ্যমে ফের কারাগারে আনা হয়।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতের সহকারি কমিশনার শুভাশীষ ধর জানান, জিএমপি’র বাসন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় গ্রেফতারকৃত কথিত ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত বৃহষ্পতিবার দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে শনিবার দুপুরে গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ফারজানা ফারুক এর আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে পূনঃরায় কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। জিজ্ঞাসাবাদ কালে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এর আগে জিএমপি’র গাছা থানায় দায়েরকৃত অপর একটি মামলায় গত রবিবার (১৮ এপ্রিল) দুইদিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

তিনি আরো বলেন, কথিত ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে বাসন থানায় গত ১১ এপ্রিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টেকনগর পাড়া এলাকার কফিল উদ্দিনের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি এ মামলা দায়ের করেন। বাসন থানার এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১৮ এপ্রিল ৭দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ সাখাওয়াত হোসেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শেখ নাজমুন নাহার রিমান্ড শুনানীর ধার্য্য তারিখ বুধবার (২১ এপ্রিল) ভার্চুয়ালী শুনানী গ্রহণ করেন। শুনানী শেষে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক। এরপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহষ্পতিবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে তাকে কারাগার থেকে থানায় আনা হয়েছে।

প্রসঙ্গতঃ রাষ্ট্র তথা সরকার বিরোধী ও আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থী উস্কানী ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ‘শিশু বক্তা’ হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে (২৬) গত ৭এপ্রিল ভোররাতে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার লেটিরকান্দা এলাকার বাড়ি থেকে আটক করে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। তিনি ওই এলাকার মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে। ওই দিন রাতেই গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানায় তাকে হস্তান্তর করা হয়। ৮ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন র‌্যাব-১ এর নায়েব সুবেদার (ডিএডি) মোঃ আব্দুল খালেক। এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে গত ১১ এপ্রিল বাসন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপর একটি মামলা দায়ের করা হয়।

আটককালে রফিকুল ইসলাম মাদানীর কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। তিনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। এছাড়াও জব্দকৃত মোবাইল ফোনে আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ ‘এডাল্ট কনটেন্ট’ অশ্লীল ভিডিও চিত্রসহ পর্নোগ্রাফি পাওয়া গেছে। এসব এডাল্ট ছবি ও ভিডিও তিনি নিয়মিত দেখতেন এবং সেগুলো স্টোর করতেন ও লিংক দিতেন। এজন্য রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রুজুকৃত মামলায় পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ৮(৫)(ক) ধারা সংযোজন করা হয়।

রফিকুল ইসলাম মাদানী বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুন্ন করা, জনমনে আতংক সৃষ্টি, সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘœ ঘটানো, আইন শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুতাসহ সরকারের প্রতি ঘৃণারভাব সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে দেশের সরল ও ধর্মানুরাগী মানুষের ধর্মীয় মুল্যবোধ ও ধর্মী অনুভুতিতে আঘাত করে বক্তব্য প্রদান করেন। ডিজিটাল মাধ্যমে প্রদান করা এসব বক্তব্য তার নির্দেশে ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যেকারণে তার অনুসারীরা গত ২৬ মার্চ ঢাকা বায়তুল মোকাররম মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা করে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। এছাড়াও তিনি সরাসরি সশস্ত্র জিহাদের ডাক দেন, এবং এক্ষুনি জিহাদের উপযুক্ত সময় বলে সবাইকে জিহাদে অংশ নেওয়ার আহবান জানিয়ে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে উস্কানির ভিডিও চিত্র ফেসবুক, ইন্টারনেট ও ইউটিউবের বিভিন্ন চ্যানেল ও পেজে আপলোডের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন বলে দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয়।