সংকট থাকায় বিভিন্ন উৎস থেকে করোনা ভাইরাসের টিকা সংগ্রহে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে সরকার। তারই ফলশ্রুতিতে আগামী সপ্তাহেই চীন থেকে আসছে তাদের উদ্ভাবিত টিকা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত সোমবার ১০ মের ভেতর চীনের টিকা আসার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ১০ নয় বরং ১২ মে আসবে এ টিকা। প্রথম পর্যায়ে আসছে চীনের উপহারের টিকার ৫ লাখ ডোজ। এ ছাড়া রাশিয়া থেকেও টিকা আনার প্রক্রিয়া অনেকদূর এগিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ মাসেই দেশটি থেকে তাদের উদ্ভাবিত টিকা স্পুটনিক-ভি পাবে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় টিকা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মজুদ থাকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেতে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। একইভাবে টিকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও সুইডেনকেও। দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসা অনিশ্চয়তায় পড়ায় গণটিকাদান কর্মসূচিতে ছেদ পড়েছে। এখনই নতুন টিকার চালান না এলে দেশে চলমান টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এমবতাবস্থায় চীনের টিকা আগামী সপ্তাহে পাওয়া গেলে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সামাল দেওয়া যাবে বলে মনে করছে সরকার। এর জন্যই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত জরুরি জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রের ওষুধ, পরীক্ষামূলক ওষুধ, টিকা ও মেডিক্যাল সরঞ্জামবিষয়ক কমিটি রাশিয়া এবং চীনের টিকা দেশে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। এমনকি বিকল্প উৎস থেকে করোনা টিকা এনে প্রয়োগের জন্য ওষুধ নীতিমালায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে। জানা গেছে, চলতি মাসেই রুশ টিকা স্পুটনিক-ভি আসছে। আপাতত

এ টিকার ৪০ লাখ ডোজ আসার সম্ভাবনা আছে। সরকারি নথিতেও উল্লেখ করা হয়েছিল, কিনতে চাইলে রাশিয়া বাংলাদেশকে মে মাস থেকেই টিকা দিতে পারবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, চীন রাশিয়া ছাড়াও সরকার এখন অন্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে পরিস্থিতি মোকাবিলায় টিকা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কারণ জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিপুল পরিমাণ অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা অব্যবহৃত রয়েছে। এ টিকা অনুদান হিসেবে পেতে চায় ঢাকা। তবে অনুদান না পেলে সেখান থেকে টিকা কিনতেও আগ্রহী বাংলাদেশ। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বহুল ব্যবহৃত ফাইজারের টিকা নিতে আগ্রহী নয় বাংলাদেশ। কারণ এ টিকা সংরক্ষণের সক্ষমতা সরকারের নেই। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ দূত জন কেরি ঢাকা সফরে এসে টিকা ইস্যুতে কথা বলেন। ওই সময় জন কেরি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে জুন মাসের পর বাংলাদেশ চাইলে টিকা পেতে পারে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, ‘টিকা পেতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হচ্ছে। মে দিবস উপলক্ষে সেখানে পাঁচ দিনের ছুটি থাকায় এখন সবকিছু বন্ধ রয়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক হলেই তারা আমাদের জন্য ভ্যাকসিনের কাজ শুরু করবে। আমরাও এ নিয়ে আশবাদী।’

ড. মোমেন আরও বলেন, ‘চীন প্রথমে আমাদের ৫ লাখ ভ্যাকসিন উপহার হিসেবে। এর পর তাদের কাছ থেকে আমরা চাহিদা অনুযায়ী কিনে নেব। ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের সঙ্গে এ নিয়ে আমাদের বিস্তর আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাদের যথেষ্ঠ সহযোগিতার মনোভাব দেখিয়েছেন। কখন এবং কত ডোজ টিকা কীভাবে আসবে তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। তারা জানে কখন এটা আমাদের দরকার। সম্প্রতি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কোভিড-১৯ এর টিকা সবার জন্য সহজলভ্য করার তাগিদ দিয়েছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনেকদিন ধরে একই কথা বলে আসছেন। দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে যদি কোভিড-১৯-এর টিকা জরুরি ভিত্তিতে দরকার হয় তা যেন দ্রুততার সঙ্গে সরবরাহ করা যায় চীন এখন সেদিকে নজর দিচ্ছে। অক্সফোর্ডের টিকার মজুদ রেখে ব্যবহার না করায় যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও সুইডেনে চিঠি দিয়ে আমরা আমাদের টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে সহায়তা চেয়েছি। রাশিয়াসহ সম্ভব্য সব দেশের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। যে কোনো একটি বা দুটি উৎস থেকে টিকা পেলে প্রথম ডোজ পাওয়া ব্যক্তিদের দ্বিতীয় ডোজ পেতে সমস্যা হবে না।’

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘চীন থেকে টিকা কেনার জন্য আমাদের তরফ থেকে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে সম্মতি পাওয়া গেলে টিকা কেনার বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে। আমাদের অনেক টিকা লাগবে। আমরা চীনের টিকা ৪ থেকে ৫ কোটি ডোজ নেব। রাশিয়ার সঙ্গেও আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা টিকা দিতে চায়, উৎপাদনও করতে চাচ্ছে। আমরা দুটি দেশের সঙ্গেই কথা বলে রাখছি।