পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সোমবার (১৭ মে, ২০২১) প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা ব্যাপী স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ে আটকে রেখে তাঁর উপর যে নির্যাতন ও হেনস্তা করা হয় তা দেশের সকল সাংবাদিকের জন্য হুমকি। আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, “এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সারাদিন শেষে প্রায় মাঝ রাতে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকেও উদ্দেশ‌্যমূলক বলে মনে করার যথেষ্ঠ কারন রয়েছে”।

এই নিন্দনীয় ঘটনাটি সাংবাদিকতা পেশার ওপর বিরাট হুমকি উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান আর্টিকেল নাইনটিন। সেই সাথে রোজিনা ইসলামের দ্রুত মুক্তি ও এঘটনায় জড়িত স্বাস্থ‌্য মন্ত্রণলায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তির দাবিও জানায় আর্টিকেল নাইনটিন।

আর্টিকেল নাইনটিন মনে করে রোজিনা ইসলামেকে পাঁচ ঘন্টা স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ে আটকে রেখে তাঁর উপর যে নির্যাতন ও হেনস্তার এই ঘটনার মাধ্যমে দেশে যে স্বাধীন সংবাদিকতা নেই এবং মত ও তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিক সহ সকল মিডিয়াকর্মী সকল সময় কী ধরনের নিরাপত্তাহীনতা ও ঝুঁকির মধ্য থেকে দায়িত্ব পালন করছে তা স্পষ্ট হয়েছে। মুক্ত গণমাধ্যম, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার উপর ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্রের এই ধরণের আক্রোশের ঘটনায় আর্টিকেল নাইনটিন উদ্বিগ্ন ও বিস্মিত।

ফারুখ ফয়সল বলেন, “করোনা মহামারিকালীন সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের কারনেই রোজিনা ইসলামকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আটকে রেখে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করা, অসুস্থ হওয়া সত্বেও তার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা বা করতে বাধা দেয়া, ৫ ঘন্টা পর পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা এবং সব শেষে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা এ সবই পরিকল্পিত বলে মনে করার যথেষ্ট কারন রয়েছে।

আর্টিকেল নাইনটিন বিশ্বাস করে, সরকারের কাছে যে তথ‌্য আছে, তা জনগণের। সেই তথ‌্য জানার অধিকার সাংবাদিকের আছে। তথ‌্য সংগ্রহ করতে সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া হলো সত্য প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া। সাংবাদিকদের তথ‌্য সংগ্রহ ও প্রকাশের কারণে হেনস্তা করার কোনো অধিকার স্বাস্থ‌্য মন্ত্রণালয় বা সরকারের নেই।

অনুসন্ধ্যানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে রোজিনা ইসলাম আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পরিচিতি পেয়েছেন। তাঁর মত একজন সাংবাদিকের সাথে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এহেন আচরণ বুঝিয়ে দেয় দেশে মিডিয়া ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা কতটুকু এবং সাংবাদিকরা কতটুকু নিরাপদ।

রোজিনা ইসলামকে হয়রানি ও মামলা করার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফারুখ ফয়সল। তিনি বলেন, “সরকারের এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ। একই সাথে পেশাগত স্বার্থে ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে একত্রিত হতে হবে। তিনি মনে করেন সাংবাদিক সংগঠনগুলো পেশাগত স্বার্থে যতদিন একত্রিত না হতে পারবে, ততদিন বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা অসম্ভব”।

পাশাপাশি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৃণমূল পর্যায়ের সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখার আহ্বানও জানান তিনি। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য আজকের এই সময়ে তৃণমূল সাংবাদিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া অত‌্যন্ত জরুরি বলে মনে করে আর্টিকেল নাইনটিন।

দিনের দিনের পর সাংবাদিক ও মুক্তচিন্তার মানুষের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১১ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ‌্যে ৩ জন সাংবাদিক বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

সম্পাদকের মন্তব্য:

আর্টিকেল নাইনটিন ​​যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা যা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। যুক্তরাজ্যে ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্তচিন্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে। সংস্থাটি ২০০৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম কার্যক্রম শুরু করে।