বাংলাদেশ রেলওয়ের আওতাধীন মধুখালী হতে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২৩ মে) দুপুরে রেলভবনে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের উপস্থিতিতে এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক মো. আসাদুল হক এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিআরইসি-সিসিসিএল জেভির পক্ষে লউ জুয়ে বিং চুক্তিতে (প্যাকেজ ডব্লিউডি-১) স্বাক্ষর করেন। প্যাকেজ ডব্লিউডি-২ (সেতু নির্মাণ) এর বিপরীতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক এবং সিআরসিসি-এমএএইচএল জেভি’র পক্ষে তাং জিয়াওজিন চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

চুক্তি অনুযায়ী, প্যাকেজ ডব্লিউডি-১ এর কাজ করবে সিসিইসি-সিসিসিএল জেভি। এর চুক্তিমূল্য ৪৩৩ কোটি ৭৮ লাখ ৩২ হাজার ৯০৮ টাকা। আর প্যাকেজ ডব্লিউডি-২ এর কাজ করবে সিআরসিসি-এমএএইচএল জেভি। এর চুক্তিমূল্য ৪৪৮ কোটি ৯৪ লাখ ৯২ হাজার ৯৭৫ টাকা। সুপারভিশন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্ট (ডিডিসি)। এতে ব্যয় হবে ২৭ কোটি ৭ লাখ টাকা।

প্রকল্পের ট্র্যাক নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে ওসিআরইসি-সিসিসিএল জেভি ও সেতু নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে ও সিআরসিসি-এমএএইচএল জেভি’র মধ্যে এ চুক্তি অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে, এক হাজার ২০২ কোটি ৪৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

প্রকল্পের মূল কাজ হচ্ছে, মধুখালী হতে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৯০ কিলেমিটার মেইন লাইন; কামারখালী ও মাগুরা স্টেশন ইয়ার্ডে ৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার লুপ লাইন; দুটি নতুন স্টেশন (কামারখালী ও মাগুরা); ২টি নতুন স্টেশন প্লাটফর্ম (কামারখালী ও মাগুরা); ২টি নতুন প্লাটফর্ম সেড (কামারখালী ও মাগুরা); একটি আন্ডারপাস, ২টি মেজর সেতু; ১৬৮৩ মিটার ভায়াডাক্ট; ১৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণ এবং ২৮টি মাইনর ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ করা। এছাড়া প্রকল্পের সিগন্যালিং ও ইলেকট্রিক্যাল কাজ হবে।

এর ভেতর দিয়ে মাগুরা জেলা বিদ্যমান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের (১৯ কিলোমিটার মেইন লাইন এবং ৪ দশমিক ৯০ কিলোমিটার লুপ লাইন) সঙ্গে সংযুক্ত হবে। রেলপথের মাধ্যমে উপ-আঞ্চলিক যোগযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে বাস্তবায়নাধীন পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ নিশ্চিত হবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘একটি দেশের সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া সুষম উন্নয়ন সম্ভব নয়। রেলওয়ে এক সময় অবহেলিত ছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলকে গুরুত্ব দিয়ে ২০১১ সালে আলাদা মন্ত্রণালয় করে দিয়েছেন। রেলকে আধুনিক ও যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’

রেলপথ মন্ত্রী আরো বলেন, ‘রেলওয়েতে চলমান পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, যমুনা নদীর ওপর আলাদা বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেল লাইন নির্মাণ যেটি ২০২২ সালে চালু হবে, মোংলা পোর্টে রেল সংযোগসহ রেলওয়েতে এখন অনেক প্রকল্প চলমান আছে। আম পরিবহণের জন্য গত বছরের ন্যায় এবারও ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালু হবে। কৃষি পণ্য পরিবহণের জন্য লকডাউনের মধ্যেও চার জোড়া পারসেল ট্রেন চলাচল করছে।’

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সিসিসিএল কোম্পানির পরিচালক এবং সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, কাজী আনিস আহমেদ, কাজী ইনাম আহমেদ, সচিব মো. সেলিম রেজা, মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. সাইফুজ্জামান শেখর প্রমুখ।