গাজীপুরে মারধর ও পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ায় এক কিশোরকে খুন করে ময়লার ভাগাড়ে চাপা দেয় তার বন্ধুরা। ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ক্লুলেস এ ঘটনার প্রায় ১০ মাস পর রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেফতারকৃতের নাম মোঃ সাগর (২০)। নেত্রকোনার পূর্বধলা থানার শালদিয়া গ্রামের জামাল ওরফে কসাই জামাইয়ের ছেলে সাগর গাজীপুরের শ্রীপুর থানার গিলারচালা নামাপাড়া এলাকার জনৈক আব্বাসের বাড়ীতে ভাড়া থাকে।

পিবিআই এর সুপার জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর থানাধীন গিলারচালা গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ী এলাকার আব্বাস আলীর ছেলে সোহান (১৪) গত বছরের ৩ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করে তার সন্ধান না পেয়ে থানায় জিডি করেন তার মা মোসাঃ নাজমা। নিখোঁজের ২৯দিন পর ৩১ আগস্ট স্থানীয় গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ী খালের ব্রীজ সংলগ্ন ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশের ময়লার স্তুপে (ভাগাড়ে) এক কিশোরের কঙ্কাল দেখতে পায় স্থানীয়রা। কঙ্কালের পাশে পড়ে থাকা ফুল প্যান্ট ও একটি ফুলহাতা পাঞ্চাবী এবং স্যান্ডেল দেখতে পেয়ে কঙ্কালটি সোহানের বলে দাবী করেন তার স্বজনরা। কাপড় ও স্যান্ডেলগুলোর আশিক আগুনে পোড়া ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কঙ্কালসহ কাপড় ও স্যান্ডেল উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে অজ্ঞাতদের আসামী করে নিহতের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। শ্রীপুর থানা পুলিশ প্রায় দুই মাস তদন্তকালে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মোঃ আজিজুল, মোঃ সাগর, হৃদয় ও সবুজ নামের ৪ যুবককে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস এ ঘটনার মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গাজীপুরের পিবিআইকে। পিবিআই’র তদন্তকালে উদ্ধারকৃত কঙ্কালের ডিএনএ পরীক্ষা করে তা সোহানের বলে নিশ্চিত হন তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ সুমন মিয়া। পরবর্তীতে থানা গ্রেফতারকৃত হাজতী আসামী মোঃ সাগরকে (২০) রিমান্ডে নিয়ে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার একপর্যায়ে সে সোহান হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু (সুইচ গিয়ার) রবিবার উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত সাগর সোমবার আদালতে নিজেকে জড়িয়ে অপর আসামীদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি প্রদান করে। এরপ্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় ১০ মাস পর চাঞ্চল্যকর কিশোর সোহান হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

তিনি আরো জানান, সোহন ও হত্যাকান্ডে জড়িতরা পরষ্পরের বন্ধু। তারা একসঙ্গে চলাফিরা করতো। খুন হওয়ার কয়েকদিন আগে সোহানকে মারপিট করে সাগর। ছেলের কাছে এ ঘটনা জানতে পেরে সাগরকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আইল্যান্ডের গাছের সঙ্গে বেঁধে জুতা ও লাঠি দিয়ে মারপিট করে সোহানের বাবা। এতে ক্ষুব্ধ হয় সাগর। এছাড়াও সোহানের বাবার তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ২শ’ পিস ইয়াবা টেবলেটসহ আজিজুলকে আটক করে। এ মামলায় আজিজুল তিনমাস হাজত খেটে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পায়। উভয় ঘটনার জেরে ক্ষুব্ধ সাগর ও তার বন্ধুরা সোহানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনারদিন ভিকটিম সোহানকে পাশর্^বর্তী জঙ্গলে ডেকে নিয়ে যায় তারা। সেখানে নিয়ে সোহানের মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করে সাগর এবং বুকে ছুরিকাঘাতে খুন করে আজিজুল। পরে নিহতের লাশ ওই ময়লার স্তুপে চাপা দিয়ে তারা পালিয়ে যায় বলে গ্রেফতারকৃত মোঃ সাগর তার স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে।