চরম দরিদ্রতার কারনে ঘর না থাকায় বাধ্য হয়ে গরুর সঙ্গে গোয়াল ঘরেই মা ও ২শিশু সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন ৩ সন্তানের জননী তাসমিনা আক্তার। তাসমিনা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ৪ নং দলগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা হারেজ আলির মেয়ে। তাসমিনার স্বামী তৌফিক আজিজের নিজস্ব কোন জমি-জমা ঘরবাড়ি না থাকায় বর্তমানে তিনি কালভৈরব বাজারের পাশে ভাইয়ের বাড়িতে টিনের ছোট্ট একটি ভাঙ্গা চালায় গরুর সাথে বসবাস করে করছেন। এ যেন বেঁচে থেকেও না থাকার উপক্রম। একদিকে গরুর প্রসাবের তীব্র দুর্গন্ধের দম বন্ধ হয়ে আসে। অপর দিকে গোয়ালঘরে ঝাকে ঝাকের মশার আক্রমণে ডেঙ্গু ম্যালেরিয়াসহ নানা রোগের আক্রান্ত হবার প্রতিনিয়ত ঝুকি রয়েই গেছে। এ যন্ত্রণা আর কষ্ট থেকে একটু নিরাপদ আবাসস্থল চায় তাসলিমা। বাঁচতে চায় কোলের দুই সন্তানকে নিয়ে, হতদরিদ্র স্বামী অভাবের তাড়নায় জীবন-জীবিকার তাগিদে স্ত্রী সন্তানদের ফেলে রেখে চলে গেছেন ঢাকা শহরে। সেখানে কাজ করে যে টাকা পাঠান তা দিয়ে ২ সন্তানের লেখাপড়া ও বৃদ্ধা মাসহ সংসার চলেনা কোনভাবেই। ফলে প্রায় দিনই তাদের অর্ধাহারে না খেয়ে থাকতে হয়।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা যা যে, ৬টি টিনে দিয়ে গড়া ভাঙ্গা একটি চালায় তাদের বসবাস। ঘরের একদিকে একখানা বিছানা, অন্যদিকে খড় বিছানো গরুর থাকার জায়গা। এভাবেই শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা পার করছেন তিনি। তার ৩ ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে তানভীর রহমান রাকিব (১৪) অন‌্যের বাড়িতে থাকেন বলেন জানান তাসমিনা। মেঝ ছেলে রাকিব তানজিব রহমান নাফিজ (১০) ৯ম শ্রেণীতে এবং ছোট্র ছেলে আলবি আজিজ তানিম (৮) ৭ম শ্রেনীতে পড়ে। সেই গোয়াল ঘরেই চলে সন্তানদের লেখাপড়া।

নিজের কোন জায়গা জমি নেই বলে ২ ভাইয়ের দশ শতক ভিটে বাড়িতে এসে ৬ খানা টিন দিয়ে একটি চালা তৈরী করে সবাই মিলে বসবাস করছেন বলেও জানান তিনি। মানুষের বাড়িতে কাজ করে সামান‌্য টাকা জমিয়ে একটি গরু কিনে পালন করছেন। এখন ওই গরুটিই তাসমিনার একমাত্র সম্বল। জরাজীর্ণ চালায় পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় গরুর গোয়াল তৈরি করতে পারেননি। ফলে বাধ্য হয়ে নিজ ঘরেই গরুসহ বৃদ্ধা মা ২ সন্তান নিয়ে দিন পার করছেন তাসমিনা আক্তার।

শুক্রবার (২৮ মে ) সরেজমিনে কথা হলে কান্না জড়িত কন্ঠে তাসমিনা বলেন, ‘এই মতন করি গরু নিয়াই থাকি। খাওয়া দাওয়া এই মতন। স্বামী ঢাকায় দিনমজুরি খাটে, সামান‌্য কিছু টাকা পাঠায় তা দিয়ে চলি,, না পাঠালে না খেয়েই থাকি। এই মতনে কাইও (কেউ) যদি একমুট দেয় তাইলে খাই আর না দিলে অমনে (না খেয়ে) থাকি। ১টা গরু কষ্ট করে নিছুং। বৃদ্ধা মা আর মোর ২ ব্যাটা মিলিয়া লালন পালন করিবার নাকছি। গরু কোনা মোর একমাত্র সম্বল । তামিনার মামা আল আমিন সরদার বলেন, বৃষ্টি আসলে তাসমিনার খুবই কষ্ট হয়। আমরা তাকে অনেক কষ্ট করতে দেখি। কয়েকদিন আগে তার চালায় ভাঙ্গা বেড়া দিয়ে বৃষ্টির পানি ঘরে প্রবেশ করত তাই তাসমিনার মা আমার একটি পুরাতন বেড়া নিয়ে গিয়ে চালায় লাগিয়েছেন।

স্থানীয় লোকজনের দাবি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কেউ ঘর হীন থাকবে না। বর্তমান সরকার ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘর উপহার দিচ্ছেন। কতৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবী তাসমিনকে একটি ঘর উপহার দেয়া হোক।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন বিষয়টি পূর্বে অবগত ছিলাম না, আপনার মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পারলাম আমি এ বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে তাকে সরকারি সুযোগ সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।