রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রপাতে শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। শনিবার (৫ জুন) সকাল থেকে বিকেল পযন্ত ঢাকা, শরীয়তপুর, নরসিংদী, ভোলা, পাবনা ও মাদারীপুরে এসব ঘটনা ঘটে।

ঢাকা: নিহত ৩

ঢাকার মালিবাগে দুপুরে বজ্রপাতের সময় দুই বোনসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। তবে শিশুদের উদ্ধার করা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেননি এই তিনজনের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে। কেউ বলছেন বজ্রপাতে, আবার কেউ বলছেন বজ্রপাতের ফলে ছিঁড়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

জানা গেছে, দুপুরে বৃষ্টির সময় বেলা দুইটা থেকে আড়াইটার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মালিবাগ এলাকার চৌধুরী পাড়ার সোনা মিয়া গলিতে এ ঘটনা ঘটে। সেখানকার আবুল হোটেলের পেছনে থাকা সাজেদার টিনশেড বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশীদ বলেন, বিদ্যুতের পিলারের তারের ওপর বজ্রপাত হয়েছে। এতে তার ছিঁড়ে যায়। পাশে লোহার গেট ছিলো। সেখানে একজন বৃদ্ধ ছিলেন এবং দুটি বাচ্চা মেয়ে খেলছিলো। তিনজনই মারা গেছেন।

নিহতদের নাম পাখি (৯), সোমা (১২) এবং আবদুল হক নামের একজন বৃদ্ধ রয়েছেন। ঘটনার পরপরই পাখিকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অন্য দুজনকে নেওয়া হয় ওয়্যারলেস গেটে কমিউনিটি ক্লিনিকে। আকাশ আহমেদ নামে আরেকজন প্রতিবেশী সোমা ও আবদুল হককে নিয়ে গিয়েছিলেন ওয়্যারলেস গেট কমিউনিটি ক্লিনিকে।

আকাশ আহমেদ বলেন, টিনের চালের ওপর বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে বজ্রপাতের সময়। বাচ্চা দুটি তখন ঘরের বাইরে স্টিলের গেটের সামনে খেলছিল। তখন বাচ্চারা মাটিতে পড়ে গেলে একজন মুরব্বি বাঁচাতে এসেছিলেন। তিনিও তখন মারা গেছেন। শিশু দুটির মা পোশাক কারখানায় কাজ করেন আর বাবা রিকশাচালক। ঘটনার সময় কেউই বাসায় ছিলেন না।

শরীয়তপুর: নিহত ২

শরীয়তপুরের জাজিরায় পৃথক স্থানে বজ্রপাতে দুজন কৃষক নিহত হয়েছেন। শনিবার দুপুরে উপজেলার জয়সাগর ও ডাক্তার মফিজ রাড়ির কান্দি গ্রামে ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- উপজেলার মূলনা ইউনিয়নের জয়সাগর গ্রামের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম খলিফা (৬২)। পালেরচর ইউনিয়নে ডাক্তার মফিজ রাড়ির কান্দি গ্রামের বাসিন্দা মালেক পেদা (৪২)।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নিহত দু’জন কৃষক। দুপুর পৌনে ২টার দিকে বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। তখন জমিতে কাজ ফেলে বাড়ির দিকে যাওয়ার সময় বজ্রপাতে তাজুল ও মালেক মারা যায়।

জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, দুপুরে বজ্রপাতে আঘাতপ্রাপ্ত দুই ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। তাদের দু’জনকে মৃত্যু অবস্থায় আনা হয়েছিলো।

নরসিংদী: নিহত ২

নরসিংদীতে বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে জেলার বেলাবতে চরউজিলাব এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদের তীরে বজ্রপাতের সময় আফিয়া বেগম (৪০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়।

একইসময় মনোহরদী উপজেলায় চালাকচর ইউনিয়নের পশ্চিম চালাকচর গ্রামের সাহাপাড়া এলাকায় বজ্রপাতে গুরুদেব সাহা (৩৪) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

নিহতের স্বজনরা জানায়, সকালে ঘুম থেকে উঠে গুরুদেব সাহা বৃষ্টির মধ্যে আম কুড়াতে যান। ওই সময় পরপর বেশ কয়েকটি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি কমলে গুরুদেবের এক জ্যাঠাতো বোন গোবর আনতে ওই আমগাছের নিচে গেলে তাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন।

এ সময় তার বুকে পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। দ্রুত গুরুদেবকে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এইদিকে আফিয়া বেগম সকালে বাড়ির পার্শ্ববর্তী সবজি ক্ষেত থেকে বরবটি তুলে আনতে গিয়েছিলেন। ওই সবজি ক্ষেতের অবস্থানের সময় তার ওপর বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। অনেকক্ষণ ধরে বাড়িতে না ফেরায় তার স্বামী তাকে খুঁজতে ওই সবজি ক্ষেতে যান। সেখানে গিয়ে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে বেলাব থানার পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।

বেলাব থানার উপপরিদর্শক মো. আলাউদ্দীন বলেন, নিহত নারী তার সবজি ক্ষেত থেকে বরবটি তুলে আনতে গিয়েছিলেন। সেখানে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। পরিবারের অনুরোধে বিনা ময়নাতদন্তে তার লাশ পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মাদারীপুর: নিহত ১

মাদারীপুরের শিবচরে বজ্রপাতে ইব্রাহিম বেপারী (৫০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় হুমায়ুন বেপারী (৬০) নামের তার ভাই আহত হন। শনিবার দুপুরে উপজেলার পশ্চিম সন্ন্যাসীরচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, নিজেদের জমিতে চাষ করা বাদাম বাড়ির সামনের একটি ক্ষেতে শুকাতে দেন ইব্রাহিম বেপারী ও হুমায়ুন বেপারী। দুপুরে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে দুই ভাই শুকাতে দেয়া বাদাম তুলে নেয়ার চেষ্টা করেন। এসময় বজ্রপাতে দুইজন আহত হন। তিনি আরো বলেন, পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়ার পথে ইব্রাহিম বেপারী মারা যান।

পাবনা: নিহত ১

পাবনার বেড়ায় বজ্রপাতে দুলাল মোল্লা (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার চাকলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। দুলাল চাকলা মোল্লাপাড়া গ্রামের ১ নম্বর ওর্য়াডের মৃত আবু সমাদ মোল্লার ছেলে।

স্থানীয়রা জানায়, সকালে নিজের জমি থেকে সবজি তুলতে মাঠে যান দুলাল। এ সময় বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিসক তাকে পাবনা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করে। সেখানে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বেড়া উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শহিদুল্লাহ জানান, পাবনা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল থেকে নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে এই বর্ষার মৌসুমে সাধারণ কৃষকে মাঠে কাজ করা সময় বৃষ্টি আর সঙ্গে বজ্রপাত হলে দ্রত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন তিনি। বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার।

ভোলা: নিহত ১

ভোলায় বাড়ির উঠান থেকে ঘরে ঢোকার সময় বজ্রপাতে মাসুমা বেগম (২৪) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় নুরে আলম (২২) নামে অপর একজন আহত হন।

শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মাসুমা বেগম ভোলার লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের তেহারি গ্রামের মো. সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো। এসময় গৃহবধূ মাসুমা বাড়ির উঠান থেকে ঘরে ঢোকার সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এছাড়াও ওই সময় একই বাড়ির কৃষক নুরে আলম গরু নিয়ে বাড়িতে প্রবেসের সময় আহত হন। তিনি লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন।

লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাকসুদুর রহমান মুরাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।