চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ। সোমবার (১৪ জুন) জাতীয় সংসদে আয়োডিনযুক্ত লবণ বিল-২০২১ আইনটি পাসের সময় জনমত যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাব ও সংশোধনীর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি তোলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে যে বিষয়গুলো আজকে বিরাট আকারের সরকারকে নাড়া দিয়েছে সেই বিষয়গুলোকে সরকার দৃষ্টিতে নেবেন। পরীমণি বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত শিল্পী। তিনি যে ঘটনার শিকার হয়েছেন, চার দিন থেকে তিনি বিচারপ্রার্থী। কিন্তু বিচার পাচ্ছেন না। এটা কি অসত্য মাননীয় স্পিকার?’

এর আগে জনমত যাচাইয়ের সময় হারুনুর রশীদ বলেন, ‘বাংলাদেশে আইন আছে কিন্তু তার ব্যবহার নেই। অভিনেত্রী পরীমণির মতো ব্যক্তি ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার। কিন্তু আইন থাকার পরও বিচার পাচ্ছেন না তিনি। সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নেই। অবশ্যই এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গতকাল এ ব্যাপারে সমস্ত মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে আমার আর কী বলার আছে।’

এদিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার করেছেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমনি। সাভার থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। এতে নাসির উদ্দিন ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে আরো ৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এর আগে সকালে রূপনগর থানার মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ করেন পরীমনি।

এর আগে রোববার (১৩ জুন) প্রথমে ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে অভিযোগ তোলার পর রাতে সাংবাদিকদের বনানীর বাসায় ডেকে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে তিনি লেখেন, ‘বরাবর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি পরীমণি। এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বুধবার রাতে উত্তরার বোট ক্লাবে ঘটনাটি ঘটে। নাসির উদ্দিন নামে একজন তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে এ ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিলেন। এমন ঘটনায় সাধারণ মেয়েরা প্রথমে কোথায় যায়? থানায় যায়। আমিও থানায় গিয়েছি। আমি বারবার বলেছি, ঘটনাটা যদি নিজের সঙ্গে না ঘটে তাহলে কেউ বুঝবে না। ওইদিন পর্যন্ত কি তবে অপেক্ষা করবেন?

কী ঘটেছিল সেটা জানতে চাই, আপনি নির্ভয়ে বলুন- উপস্থিত সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পরীমণি বলেন, ‘আমার মুখটা সাদা কাপড়ে ঢাকা পড়লেই কেবল বুঝতেন। আমি চার দিন ধরে কারও সাপোর্ট পাইনি। আপনারা সত্যিটা খোঁজেন। সাধারণ কোনো মেয়ের হলে সে খবর হয়তো আপনাদের কাছে পৌঁছায় না। সাংবাদিকদের কাছে খবর পৌঁছানো হয় না। আমার মতো যখন কোনো মেয়েকে ভয় দেখানো হয় তখন সাধারণ মেয়ের খবর তো পাবেন না!’

পরীমণি আরো বলেন, বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তার এক বন্ধু (অমি) বাসায় আসেন। বাসা থেকে তাকে উত্তরার বোট ক্লাবে (ঢাকা বোট ক্লাব) নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জিমি (ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী)। বোট ক্লাবে যাওয়ার পর সেখানে সাত/আটজনের একটা গ্রুপ ছিল। তাদের মুরব্বি ছিলেন নাসির উদ্দিন (নাসির ইউ মাহমুদ)। তিনি বোর্ড ক্লাবের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দেন। নাসির উদ্দিনসহ (নাসির ইউ মাহমুদ, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী) উপস্থিত সাত/আটজন আমাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে থাকে। আমাকে আটকে ফেলে। জোর করে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করার চেষ্টা করে। জিমিকে মারধর করা হয়। অশ্লীল নানা কথাবার্তা বলা হয়। মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় নাসির উদ্দিন (নাসির ইউ মাহমুদ) তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেন পরীমনি।