সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ হত্যা মামলায় কারাগারে বন্দি টেকনাফ মডেল থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রীর চুমকি কারণের থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে নিয়ে রিসিভার নিয়োগের জন্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৯ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান এ আদেশ দেন। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে গত বছরের আগস্টে দুদক মামলা করে।

দুদকের কোর্ট পরিদর্শক এমরান হোসেন বলেন, প্রদীপ ও তার স্ত্রীর নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে নিয়ে রিসিভার নিয়োগের জন্য আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদক সূত্র জানায়, প্রদীপ কারাগারে যাওয়ার পর থেকে চুমকি পলাতক।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, এ মামলার তদন্ত শেষের দিকে। সম্পত্তিগুলো যাতে বেহাত না হয়, সে জন্য রিসিভার নিয়োগের আবেদনটি করা হয়।

এর আগে সোমবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন রিসিভার নিয়োগের জন্য আদালতে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, প্রদীপ ও তার স্ত্রীর নামে থাকা সম্পত্তি ইতোপূর্বে আদালত ক্রোক করেছেন। নগরের পাথরঘাটায় থাকা ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরের বাড়ি, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস এবং কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাটে রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে রিসিভার নিয়োগ করা হোক।

গত বছরের ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজারের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রদীপসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর অসুস্থতার কথা বলে থানা থেকে ছুটি নিয়ে চলে যান প্রদীপ। তিনি চট্টগ্রামে আত্মগোপনে থাকেন। সেখান থেকে ৬ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। তারপর থেকে প্রদীপ কারাগারে আছেন। সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে রোববার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নির্দেশে প্রদীপ, তার স্ত্রী, কক্সবাজারের পুলিশ সুপারসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে।

গত ২৩ আগস্ট দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, প্রদীপের বাবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) একজন নিরাপত্তাপ্রহরী ছিলেন। ১৯৯৫ সালে উপপরিদর্শক (এসআই) পদে যোগ দেন প্রদীপ। ২০০২ সাল থেকে তার সম্পদগুলো দৃশ্যমান হতে থাকে। নানা কারণে তিনি আলোচিত হতে থাকেন।

দুদক সূত্র জানায়, নগরের পাথরঘাটা এলাকায় চুমকি কারণ তার বাবার কাছ থেকে একটি ছয়তলা বাড়ি দানপত্রমূলে পেয়েছেন বলে সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু চুমকির দুই ভাই ও আরেক বোন বাবার কাছ থেকে কোনো বাড়ি পাননি। তারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। এতে বোঝা যায়, প্রদীপ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ওই বাড়ি করেছেন। কিন্তু কাগজপত্রে তার শ্বশুরের নামে রাখেন। ২০১৩ সালে শ্বশুরের কাছ থেকে দানপত্রমূলে নিবন্ধন করে নেন তিনি। ওসি প্রদীপের সব সম্পত্তিই তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে। চুমকি গৃহিণী। তার বিশ্বাসযোগ্য জ্ঞাত আয়ের উৎস নেই। চুমকির নামে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৮৬৯ টাকার সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। তার মধ্যে তিনি পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে খরচ করেছেন ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

চুমকির আগের সঞ্চয়, উপহার, বাড়িভাড়া থেকে বৈধ আয় হিসেবে ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ২৩৪ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। বৈধ আয় বাদ দিলে চুমকির নামে মোট ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার অবৈধ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। এটা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে সম্পদ ক্রয় করে স্ত্রীর নামে রেখেছেন বলে দুদক অনুসন্ধানে তথ্য পেয়েছে।