গাজীপুরে তিন বছরের পাওনা বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে আবারো মঙ্গলবার কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে এক পোশাক কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিক্ষুব্ধ কর্মচারীরা ঢাকা-গাজীপুর সড়ক প্রায় দুই ঘন্টা অবরোধ করেছে। এদিকে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ন্যাশনাল কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং কো: লি: নামের অপর একটি কারখানার শ্রমিকরা।

আন্দোলনরতরা জানায়, গাজীপুর মহানগরীর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) সামনে লক্ষীপুরা এলাকাস্থিত স্টাইল ক্র্যাফ্ট পোশাক কারখানায় প্রায় সাড়ে ৭শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক রয়েছে। কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চলতি বছরের মার্চ, মে ও জুন মাসসহ গত সেপ্টেম্বর মাসের পূর্ণ বেতন ভাতা সহ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর, ২০২০ সালের মার্চ ও আগস্ট মাসের শতকরা ৫০ ভাগ, অক্টোবর মাসের ৩৫ ভাগ, নবেম্বর মাসের ১৫ ভাগ বেতন পাওনা রয়েছে। এ ছাড়াও কারখানার কর্মচারীরা ইনক্রিমেন্টসহ তাদের চার বছরের বাৎসরিক ছুটির ও ২ বছরের ঈদবোনাসের টাকা পাওনা রয়েছে। তারা বেশ কিছুদিন ধরে এসব পাওনাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়ে আসছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধের একাধিকবার তারিখ ঘোষণা করলেও পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ কর্মকর্তা কর্মচারীদের পাওনা গত মার্চ মাসের বকেয়া বেতন ৭ জুলাই এবং মে ও জুন মাসের বকেয়া বেতন ১৫ জুলাই ও ঈদবোনাস ১৮ জুলাই পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে তারিখ ধার্য্য করে ঘোষণা দেয়। কিন্তু মালিকপক্ষ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৭ জুলাই কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ না করে তিন মাসের বকেয়া পাওনা একত্রে ১৫ জুলাই পরিশোধের ঘোষণা দেয়। এতে স্টাফদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে গত ৬ জুলাই থেকে লাগাতার কর্মবিরতি করে আসছে। তারা গত ৮ জুলাই সড়ক অবরোধ করে। এক পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে তাদের এক মাসের বেতন ভাতা মঙ্গলবার এবং অপর দুই মাসের পাওনাদি ১৫ জুলাই পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে তারিখ ধার্য্য করে ঘোষণা দেয়। সর্বশেষ ঘোষণানুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন ভাতার জন্য মঙ্গলবার সকালে কারখানার গেইটে অবস্থান নেয়। কিন্তু এদিনও তাদের পাওনাদি পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করে কারখানার মালিক। এতে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এসময় তারা প্রতিশ্রতি অনুযায়ী পাওনাদি পরিশোধের দাবী জানিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর সমীর চন্দ্র সূত্রধর ও স্থানীয়রা জানান, স্টাইল ক্র্যাফ্ট পোশাক কারখানার শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মঙ্গলবার সকালে কারখানায় আসে। কিন্তু কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা (অফিস স্টাফ) কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি শুরু করে। এসময় তারা কারখানার ভিতরে ও গেইটে অবস্থান নিয়ে তাদের পাওনা চার মাসের পূর্ণ বেতন ভাতাসহ গত তিন বছরের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবীতে বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা বেলা ১২টার দিকে কারখানার সামনে ঢাকা-জয়দেবপুর সড়কের দুই পাশে অবস্থান নিয়ে প্রায় পৌণে এক ঘন্টা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। একপর্যায়ে তারা দুপুর পৌণে ১টার দিকে ওই সড়কের উপর অবস্থান নেয়। এসময় তারা কাঠের চকি ফেলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। অবরোধের কারণে সড়কের উভয়দিকে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে।

তিনি জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পাওনাদি পরিশোধের বিষয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিকেল পৌণে ৩টার দিকে সড়কের অবরোধ প্রত্যাহার করে আন্দোলনকারীরা কারখানায় ফিরে আসেন। সড়কের অবরোধ তুলে নিয়ে আন্দোলনরতরা কারখানায় ফিরে এলে সড়কে ফের যানবাহন চলাচল শুরু করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা কারখানার মালিকের আগমনের অপেক্ষায় গেইটে অবস্থান করছিল।

এদিকে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে গাজীপুর মহানগরীর বড়বাড়ি এলাকার ন্যাশনাল কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং কোঃ লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে।

বিক্ষোভ করেছে একটি কারখানা শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বড়বাড়ি এলাকায় ন্যাশনাল কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং কো: লি: কারখানার শ্রমিকরা কারখানার মূল ফটকে এ বিক্ষোভ করেছে।

ওই কারখানার সহকারী কেমিস্ট এবং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহফুজুল ইসলাম জানান, এ কারখানায় দেড় শতাধিক শ্রমিক রয়েছেন। গত এপ্রিল মাস থেকে কারখানার শ্রমিকরা গত ঈদুল ফিতরের বোনাসসহ চার মাসের বেতন ভাতা পাওনা রয়েছেন। কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আশ^াস দিলেও পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে কলকারখানা অধিপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেও কোন সমাধান হয় নি। এর প্রেক্ষিতে শ্রমিকরা গত তিনদিন যাবৎ মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে কারখানা চালু ও বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।
এব্যাপারে কারখানার ইনচার্জ আবু বকর সিদ্দিক জানান, শ্রমিকদের রোজার ঈদের আগে এপ্রিল মাসের ১৯ দিনের বেতন এবং ঈদ বোনাস দেয়া হয়েছে। এখন শুধু এপ্রিলের ১১দিন এবং মে-জুন মাসের বেতন তারা পাবে। গত ১০ জুলাই শনিবার শ্রমিকদের নিয়ে কারখানার এমডি ভার্চুায়ালি মিটিং করেছেন। মিটিংয়ে করোনাকালীন বন্ধের প্রথম ৪৫দিনের ৫০ শতাংশ এবং পরের দিনগুলোর ২৫ শতাংশ বেতন দেয়ার কথা জানানো হয়। কিন্তু শ্রমিকরা সিদ্ধান্তটি না মেনে কারখানার মূল ফটকে বিক্ষোভ করছে। বিষয়টি নিয়ে কলকারখানা অধিদপ্তর এবং ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পুলিশ সঙ্গে আলোচনা চলছে। খুব শীঘ্রই এ সমস্যার সমাধান করা হবে।