করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেনের উচ্চ চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উদ্ভাবিত যন্ত্র অক্সিজেট শেষ পর্যন্ত সরকারের অনুমোদন পেয়েছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফল হওয়ার পরও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (ডিজিডিএ) অনুমোদন না পাওয়ায় বিষয়টি গত ৫ জুলাই উচ্চ আদালতের নজরে এনেছিলেন এক আইনজীবী। পরে উচ্চ আদালত বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার পরামর্শ দেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ২০০টি অক্সিজেট তৈরির অনুমোদন মিলেছে বলে আমাদের সময়কে নিশ্চিত করেছেন প্রকল্পটির তত্ত্বাবধানকারী বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তওফিক হাসান। তিনি বলেন, আজ (গতকাল) সন্ধ্যা সাতটার সময় আমাদের প্রাথমিকভাবে ২০০টি অক্সিজেট তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো ব্যবহারের পর রোগীর কি রকম অবস্থা হয় তার রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সার্বিক দিক ভালো হলে তারা আরও বৃহৎ পরিসরে অনুমোদন দিবে।

ড. তওফিক হাসান বলেন, এর আগে ‘অক্সিজেট’ নামের সি-প্যাপ যন্ত্রটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) অনুমোদন না দেওয়ায় বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী অনীক আর হক। তখন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দেন। কোনো কারখানা থেকে উৎপাদন হচ্ছে না বলে অক্সিজেটের অনুমোদন দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছিল ডিজিডিএ। অথচ দেশে অক্সিজেন সরবরাহের অপ্রতুলতার কারণে কোভিড রোগী মারা যাচ্ছে।

অক্সিজেট সি-প্যাপ প্রকল্পটির আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের উদ্ভাবন ও
উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) প্রকল্প, অঙ্কুর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এবং মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত রয়েছেন বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মীমনুর রশিদ, কাওসার আহমেদ, ফারহান মুহিব, কায়সার আহমেদ, সাঈদুর রহমান এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তওফিক হাসান।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় কম খরচে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে ‘অক্সিজেট’ নামের উদ্ভাবিত ভেন্টিলেটর যন্ত্রটি একই সঙ্গে সহজে ব্যবহার ও বহনযোগ্য। এই যন্ত্র কোনো বিদ্যুৎশক্তি ছাড়াই অক্সিজেন সিলিন্ডার বা হাসপাতালে অক্সিজেন লাইনের সঙ্গে যুক্ত করে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। প্রায় ১০ মাস কাজ করে এ যন্ত্র উদ্ভাবন করা হয়। ইতোমধ্যে যন্ত্রটি বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) অনুমোদন নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম, দ্বিতীয় ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও সফল হয়।

অক্সিজেট সি-প্যাপ ভেন্টিলেটর স্বল্প মূল্যে সাধারণ ওয়ার্ডেই উচ্চগতির অক্সিজেন দিতে পারে এবং এতে রোগীদের আইসিইউতে ভর্তি কমাতে সাহায্য করবে। অক্সিজেট একটি সূক্ষ্ম ভেঞ্চুরি ভালবের মাধ্যমে বাতাস ও অক্সিজেনের সংমিশ্রণ তৈরি করে অন্তত ৬০ লিটার প্রতি মিনিট গতিতে সরবরাহ করে। মেডিক্যাল অক্সিজেন সাপ্লাই ও দ্বৈত ফ্লো-মিটারের সাহায্যে এটি প্রয়োজনে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত অক্সিজেন দিতে পারে।