জীবনবাজি রেখে দেশ স্বাধীন করলে আজও স্বাধীনতার সুফল পাচ্ছেননা ৩ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ কয়েকশত পরিবার। প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয় জরাজীর্ণ একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে। জীবদ্দশায় পাকা সেতু দেখতে চাইলেও সে সৌভাগ্য হবেনা কিনা ৩ মুক্তিযোদ্ধার কেউ জানেনা।

আর দৃশ্যটি প্রতিবেদকের নজরে আসে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের পূর্ব রুদ্রেশ্বর মন্ডল পাড়া গ্রামে।

সরেজমিনে সোমবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে ঐ এলাকা গিয়ে বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে জানক যায়, দেশ স্বাধীনের পর থেকে এলাকাবাসি নিজ অর্থায়নে তিস্তার শাখা নদীর উপর প্রতিবছর বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত করে আসছেন। সেই বাঁশের সাঁকোটিও এখন নড়বড়ে অবস্থা। এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেকে ক্ষতিগ্রস্থও হয়েছেন। কয়েকহাজার মানুষের যাতায়তের একমাত্র ভরসা এই সাঁকোটি হলেও সেখানে সেতু নির্মানের উদ্যেগ নেই কারো। অথচ একই এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে সংযোগ সড়ক নেই এমন যায়গায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তিনটি সেতু নির্মান করেছেন।
বিষয়টি তুলে ধরার জন্য বাঁশের সাঁকোটির ছবি তুলতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এক বৃদ্ধ বলছিলো, ছবি তুলে কি করবেন? আমাদের দুঃখ দুর্দশা দেখার তো কেউ নেই। এসময় পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন কুদ্দুস ক্বারী নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার সঙ্গে কথা বলতেই তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কি আর বলব বাবা, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ স্বাধীন করলেও আজও স্বাধীন দেশের স্বাদ পেলাম না।

তিনিসহ আজাহারুল ইসলাম ও জানু মন্ডল একই গ্রামের বাসিন্দা এবং তিনজনই মুক্তিযুদ্ধে অংশহণ করেছিলেন।
ঐ বীর মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, সৃষ্টিকর্তা আমাদের তিনজনকেই এখনো বেঁচে রেখেছেন। এই বৃদ্ধ বয়সে এসেও জীবনের ঝুকি নিয়ে প্রতিদিন এই নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে। জানি না এই বৃদ্ধ বয়সে এখানে একটি সেতু দেখে যেতে পারবো কি না?
একই গ্রামের নুর ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, চার গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সাঁকোটি। এই সাঁকো দিয়ে প্রায় কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। নির্বাচনের সময় সেতু করে দিবে বলে সবাই আশ্বাস দিয়ে ভোট নিয়ে যায়। নির্বাচিত হওয়ার পর সেতু আর হয় না! স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করে শুধু প্রতিশ্রুতিই পাওয়া গেছে কিন্তু বাঁশের সাঁকোটির পরিবর্তে এখানে আজ পর্যন্ত একটি সেতু নির্মান হয়নি। কবে নির্মাণ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেননি কেউই। তবে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের বার বার ডেকে এনে দেখানোর পরেও সেতু নির্মানের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি । শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে গেলেন কেউ কথা রাখলেন না।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, যত দ্রুত সম্ভব মুক্তিযোদ্ধা এবং এলাকাবাসীর কষ্ট লাঘবে ঐ এলাকায় শীঘ্রই সেতু নির্মাণ করে দেওয়া হবে।