গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান থেকে উদ্ধারকৃত অজ্ঞাত লাশের (নারীর) পরিচয় সনাক্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চাঞ্চল্যকর এ খুনের ঘটনায় নিহতের স্বামীকে সোমবার কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্ত্রীর পরকীয়া ও দাম্পত্য কলহের জেরে হাতের রগ কেটে ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ওই নারী গার্মেন্টস কর্মী জরিফুলকে (৩৫) খুন করেছে তার স্বামী। ক্লুলেস এ ঘটনার মাত্র ৪দিনের ব্যবধানে এ হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে পিবিআই।

গ্রেফতারকৃতের নাম- রাজু আহম্মেদ (৩১)। সে জামালপুরের ইসলামপুর থানাধীন পাঁচবাড়ীয়া এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে।

গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, গত বৃহষ্পতিবার দুপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও বনবিভাগের মাস্টারবাড়ি অফিসের পাশে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ভিতর এক অজ্ঞাত নারীর (৩৫) লাশ উদ্ধার করে সদর থানা পুলিশ। নিহতের ডান হাতের কব্জিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রগ কাটা ও গলায় ওড়না পেঁচানো এবং গলাসহ ডান কানের ও গালের বাম পাশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। সংবাদ পেয়ে গাজীপুর পিবিআই ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে লাশের পরিচয় জরিফুল (৩৫) বলে সনাক্ত করে এবং নিহতের আত্মীয় স্বজনকে সংবাদ দেয়। এ ব্যাপারে নিহতের ভাই সুজা মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্তকালে গাজীপুর পিবিআই জেলা স্ব-প্রনোদিত হয়ে মামলাটি অধিগ্রহণ করে। পিবিআই’র তদন্তকালে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনায় জড়িত নিহতের স্বামী রাজু আহম্মেদকে কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে সোমবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ব্লেড উদ্ধার করা হয়। এরপ্রেক্ষিতে ক্লুলেস এ ঘটনার মাত্র ৪দিনের ব্যবধানে চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

পিবিআই’র ওই কর্মকর্তা জানান, ২০০৭ সালে প্রেম করে জরিফুলকে বিয়ে করে রাজু। তাদের ৮ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন সফিপুর পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে রাজু স্থানীয় লিবার্টি গার্মেন্টসে ডায়িং এর কিউসি পদে এবং তার স্ত্রী জরিফুল মৌচাক নীট কারখানায় চাকুরী করে। জরিফুল পাশর্^বর্তী কক্ষের ভাড়াটিয়া রুবেলের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসে ওই বাসা ছেড়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া নেন রাজু। এদিকে জরিফুল বেতনের টাকা স্বামীকে না দিয়ে তার ছোট ভাই সুজার মাধ্যমে মা-বাবার (জরিফুলের) কাছে পাঠিয়ে দিত। এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজুর সঙ্গে তার স্ত্রী জরিফুলের মাঝে ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল। গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতেও তাদের মাঝে ঝগড়া হয়। এসময় রাজুর বাবা মার নাম নিয়ে অনেক গালাগাল দেয় জরিফুল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জরিফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে রাজু।

পরিকল্পনা অনুযায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে কারখানায় খাবারের বিরতির সময় বিশেষ কাজ থাকার কথা বলে স্ত্রী জরিফুলকে মিনিবাসে ও অটো রিক্সায় করে মহানগরীর ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এলাকায় নিয়ে যায় রাজু। তারা উদ্যানের গজারী বনের ভিতর দিয়ে হাটতে থাকে। নির্জন এলাকা দেখে জরিফুল দাঁড়িয়ে পড়লে তাকে খুন করা হবে বলে জানায় রাজু। এসময় জরিফুল চিৎকার দিতে চাইলে তার ঘাড় ও মুখ চেপে ধরে রাজু। ঘটনার সময় ধ্বস্তাধ্বস্তিকালে জরিফুল পড়ে গিয়ে গাছের স্েগ ধাক্কা লেগে মাথায় আঘাত পায়। এসময় জরিফুলের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে শ^াসরোধে হত্যা করে রাজু। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ব্লেড দিয়ে স্ত্রী জরিফুলে ডান হাতের কব্জিতে কেটে দিয়ে লাশ ফেলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে রাজু।