কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যু নিয়ে করা মামলা নাটকীয় মোড় নিতে শুরু করেছে। পিবিআই রবিবার (৩ অক্টোবর) দুই দিনের রিমান্ড চেয়েছে মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসার। আদালত সেই রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। পিয়াসাকে রিমান্ডে আনার ফলে এই মামলার নাটকীয় মোড় নিতে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে। পিয়াসাকে মাদক ব্যবসা এবং অবৈধ নানা রকম কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ইতিমধ্যে দুইটি মামলায় জামিন পেয়েছেন।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, পিয়াসার বাসায় রাতের যে আসর বসতো, সেই আসরে যে সমস্ত নারীদের আনা হতো তাদের মধ্যে মুনিয়া ছিল অন্যতম। পিয়াসার কল রেকর্ড অনুসন্ধান করে নুসরাতের সঙ্গে পিয়াসার একাধিক কথোপকথনের তথ্য পাওয়া গেছে। এই সূত্র ধরেই পিবিআই পিয়াসার রিমান্ড চেয়েছে।

প্রসঙ্গত, পিয়াসার বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই সময়ে তদন্ত করে জানা যায়, পিয়াসার বাসায় অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তিরা আসতেন এবং সেখানে সারারাত ধরে পার্টি হতো এবং বিভিন্ন নারীদেরকে সেখানে উপভোগের সামগ্রী হিসেবে নিয়ে আসা হতো এবং তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হতো। এটিই ছিল পিয়াসার উপার্জনের অন্যতম পথ। যে সমস্ত নারীরা পিয়াসাদের রাতের আসরে যেতেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে মুনিয়া অন্যতম। তবে পিয়াসার সঙ্গে নুসরাতের যোগাযোগ হতো বলে অনেকে মনে করে। আর এই যোগাযোগ হতো মুনিয়াকে কেন্দ্র করেই।

পিয়াসা বিভিন্ন ব্যবসায়ীদেরকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য নারীদেরকে ব্যবহার করতেন। বিভিন্ন উৎস থেকে নারীদের নিয়ে আসা হতো। মেয়েরা যে শুধু মাত্র শোবিজ এর তারকা ছিল তা না, সাধারণ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার এবং উঠতি বয়সী তরুণীদেরকেও পিয়াসার আসরে নিয়ে আসা হতো। মুনিয়া ছিল নুসরাতের অর্থ উপার্জনের অন্যতম হাতিয়ার। ধারণা করা হচ্ছে যে, মুনিয়াকে নুসরাত পিয়াসার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন যেন নুসরাত উপার্জন করতে পারে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে যে, মুনিয়াকে ব্যবহার করেই নুসরাত বিপুল ভাবে আর্থিক ভাবে লাভবান হতেন এবং বিভিন্ন মহলে তাকে ব্যবহার করতেন। পরবর্তীতে যে সমস্ত ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কাছে মুনিয়া যেতেন তাদেরকে নুসরাত ব্ল্যাকমেইল করতেন। তদন্তকারীরা বুঝতে চেষ্টা করছেন যে, পিয়াসার সাথে মুনিয়ার কি সম্পর্ক ছিল। মুনিয়া কেন পিয়াসাদের রাতের আসরে যেতেন? একই সঙ্গে এই ঘটনায় নুসরাতের যোগসূত্র কোথায়?

বিভিন্ন সূত্র বলছে, নুসরাতই মুনিয়াকে এই ধরনের কাজে ব্যবহার করতেন। পিয়াসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই সম্পর্কে ঘটনার আদ্যোপান্ত বেরিয়ে আসবে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে। পিয়াসাই এই মামলার নুসরাতের সংশ্লিষ্টতার একটি বড় প্রমাণ হতে পারে বলেও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে।

গত ২৬ এপ্রিল গুলশানে একটি ফ্ল্যাটে মুনিয়া মারা যায়। মৃত্যুর পর তার বোন নুসরাত আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করেছিলেন। পুলিশ তিন মাস তদন্ত করার পর এই মামলাটি নাকচ করে দেন এবং আত্মহত্যার কোন প্ররোচনা হয়নি বলে পুলিশ তার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন। এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার পর নুসরাত নারাজি দরখাস্ত দেন। পরবর্তীতে তিনি একটি নতুন মামলা দায়ের করেন। সেখানে তিনি হত্যা এবং ধর্ষণের অভিযোগ উত্থাপন করেন। সেই মামলার জট খুলতেই এখন পিয়াসাকে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।