চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে সন্ত্রাসী হামলার শিকার বড়উঠানের ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. দিদারুল আলম (৪২) হামলার আশঙ্কায় ঘটনার আগেই সিএমপির কর্ণফুলী থানায় সাধারণ ডায়রি করেছিলেন।

প্রায় ২৭ মাস আগেই তিনি ও তাঁর পরিবারের প্রাণহানির আশঙ্কায় সাধারণ ডায়রি করলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখেনি। ফলে, গত বৃহস্পতিবার তিনি সশস্ত্র হামলার শিকার হয়ে এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

একই সময়ে হামলার শিকার উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ ও চেয়ারম্যানের পরিবার অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যানের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা মো. দিদারুল আলম কে চিরতরে বিদায় করতেই তার ওপর এ বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। হতে পারে যারা দু’বছর আগে চেয়ারম্যানের বাসায় জোর করে প্রবেশ করতে চেয়েছিল। এরাই একই কান্ড ঘটালো।’

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. দিদারুল আলম ও অন্যান্যরা ১৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার সময় উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের শাহমীরপুর বাদামতল এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলার শিকার হন। ধারালো কিরিচের আঘাতে তার ডান হাতের কব্জির নিচে ও হাতের আঙ্গুল কেটে হাড় ভাঙাসহ গুরুতর জখম হয়। এসময় মোটরসাইকেলে চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা যুবলীগ নেতা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ও ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা মো.ফারুককে ও এলোপাতাড়ি আঘাত করে হাতে পিঠে গুরুতর জখম করে। আঘাতে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে পকেটে থাকা নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে তাদের ২৮ নং ওয়ার্ডের ১৩, ১৪ নং ও ২৬ নং ওয়ার্ডের ৪৮ নং বেডে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ওদিকে, তাৎক্ষনিক হামলার প্রতিবাদে ওইদিন স্থানীয় জনতা পিএবি সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এ ঘটনায় ১৭ অক্টোবর রাতে আহত মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাদি হয়ে কর্ণফুলী থানায় (গুরুতর জখম, চুরি ও প্রাণনাশের অপরাধে) মামলা (নং-২৯) দায়ের করেন। মামলার এজাহারে নাম উল্লেখিত ১৪ আসামিরা হলেন-ইলিয়াছ সাদ্দাম (২৯), মো. জামাল (২৮), মো. কপিল উদ্দিন (২৭), আবদুর রহমান (৩১), মো. ফিরোজ (২৮), মো. আজিজ প্রকাশ লেঙ্গা আজিজ (৩২), মো. নাঈম উদ্দীন (২৮), মো. সেলিম (৩৩), মো. দিদারুল ইসলাম দিদার (২৮), মো. ইলিয়াছ প্রকাশ কালু (২৮), মো. রোকন (২৮), সালা উদ্দীন (২২), মো. রিফাত (২৬) ও মো. রুবেল (৩০। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ১৫/২০ জন রয়েছে। এদের বেশির ভাগ আসামির বাড়ি উপজেলার ২নং বড়উঠান ইউনিয়নের শাহমীরপুর গ্রামের কুলাল পাড়া, রাজ্জাকপাড়া, জামাদারপাড়া ও জাগিরপাড়া।

থানা সুত্রে আরো জানা যায়, বড়উঠানের চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের প্রাণহানির আশঙ্কায় ২০১৯ সালের জুলাই মাসের ১০ তারিখে থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (নং-৪৫৮)) করেছিলেন। ওই সাধারণ ডায়রিতে তিনি অজ্ঞাত ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে বাড়িতে গিয়ে পুলিশ পরিচয় দিয়ে চেয়ারম্যানকে খোঁজা ও প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রকাশ করে অভিযোগ করেছিলেন। অজ্ঞাত লোকজন ওইদিন চেয়ারম্যানের বাড়ির মূলগেইটে ধাক্কাধাক্কি করে জোর করে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন। পরে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে থানায় জিডি করলেও পুলিশ আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে চেয়ারম্যান জানান।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, জনস্বার্থে সকল প্রকার উন্নয়ন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে মো. দিদারুল আলম বড়উঠান ইউনিয়নের সকলের মাঝে হয়ে উঠেছেন এক জনপ্রিয় চেয়ারম্যান। একাধারে দু’দুবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এসব কারণে একটি স্বার্থন্বেষী মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে হত্যা চেষ্টাসহ তার পরিষদের লোকজন ও অনুসারি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মনে করেন।

স্থানীয় লোকজন আরও জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একই দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে একাধিক গ্রুপে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোবারক হোসেন এর কোন বক্তব্য পাওয়া না গেলেও কর্ণফুলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. দুলাল মাহমুদ জানান, ‘বড়উঠানের চেয়ারম্যানের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে। অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের প্রাণহানির আশঙ্কায় ২০১৯ সালে করা সাধারণ ডায়রির কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই সময় যেহেতু আমি ছিলাম না। তাই দু’বছর আগে কি হয়েছে তা আমি বলতে পারব না।’ সিএমপি বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এস এম মেহেদী হাসান বলেন, ‘চেয়ারম্যানের ওপর হামলার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। থানায় মামলা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি তৎকালিন জিডির বিষয়েও আমি খবর নিচ্ছি।’

 

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি