নতুন বাড়িতে উঠা হলো না ঢাবি’র অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফারের। মাত্র ১০ হাজার টাকার লোভ সামলাতে না পেরে তাঁকে খুন করেছে নিজ বাড়ির নির্মাণ শ্রমিক আনারুল ইসলাম। এ খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আনারুল ইসলামকে (২৫) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। শনিবার বিকেলে গাজীপুরের অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী পাভেল সুইট রিমান্ড মঞ্জুরের এই আদেশ দেন।

গ্রেফতারকৃত আনারুল ইসলাম (২৫) গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর থানার বুর্জুগ জামালপুর গ্রামের আনসার আলীর ছেলে। সে গাজীপুরের কাশিমপুর থানাধীন দক্ষিণ পাইনশাইল এলাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবাসন প্রকল্পের অধ্যাপক সাইদা গাফফারের নির্মাণাধীন বাড়ির রাজমিস্ত্রীর হেলপার হিসেবে কাজ করতো।

জিএমপি’র সহকারি কমিশনার (প্রসিকিউশন) ফাহিম আসজাদ জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদা গাফফার (৭১) নিখোঁজের ৩দিন পর শুক্রবার তার লাশ গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন দক্ষিণ পাইনশাইল এলাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবাসন প্রকল্পের একটি ঝোপের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয়। অধ্যাপক সাইদা গাফফারকে হত্যার অভিযোগে নিহতের ছেলে সাউদ ইফখার বিন জহির ওই থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় অধ্যাপক সাইদা গাফফারের নির্মাণাধীন বাড়ির রাজমিস্ত্রীর হেলপার আনারুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে শনিবার আদালতে পাঠান তদন্ত কর্মকর্তা কাশিমপুর থানার এসআই দীপঙ্কর রায়। শুনানী শেষে আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জর করেন। উক্ত রিমান্ড ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কার্যকর করার জন্য আদেশ দেন আদালতের বিচারক। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবারই পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

নিহতের ছেলে সাউদ ইফখার বিন জহির ও স্বজনরা জানান, শুক্রবার গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মায়ের (অধ্যাপক সাইদা গাফফার) ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। রাতে বাদ এশা রাজধানীর উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের বায়তুন নূর জামে মসজিদে জানাজা শেষে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবি গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। অধ্যাপক সাইদা গাফফারের কাছে থাকা ১০ হাজার টাকার লোভ সামলাতে না পেরে তাকে খুন করা হয়েছে।

তারা জানান, ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফার। নিহত সাইদা গাফফার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মৃত কিবরিয়া উল খালেকের স্ত্রী। তাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পানিশাইল এলাকার মোশারফ হোসেন মৃধার বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকতেন সাইদা গাফফার। ভাড়া বাসায় থেকে তিনি একই এলাকাস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আবাসন প্রকল্পের ভেতরে বাড়ি নির্মাণ করছিলেন। নির্মাণ কাজ শেষে আগামী ৩০ জানুয়ারি ওই বাড়িতে উঠার কথা ছিল তাঁর। অথচ নতুন বাড়িতে উঠা হলো না তাঁর।

জিএমপি’র কাশিমপুর থানার ওসি মাহবুবে খোদা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদা গাফফার (৭১) নিখোঁেজর ঘটনায় তার নির্মানাধীন বাড়ির শ্রমিক আনারুল ইসলামকে গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর থেকে বৃহষ্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফারকে হত্যার কথা স্বীকার করে আনারুল। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিখোঁজের ৩দিন পর শুক্রবার নির্মাণাধীন বাড়ির পার্শ্ববর্তী (আনুমানিক ২০০ গজ দূরে) একটি ঝোপের ভিতর থেকে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় অধ্যাপক সাইদার লাশ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতের কাছ থেকে নিহতের ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আনারুল জানায়, গত মঙ্গলবার নির্মাণাধীন বাড়ির কাজ পরিদর্শণ শেষে সন্ধ্যার পর ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফার। কিছুদুর যাওয়ার পর তার কাছে কিছু টাকা চায় আনারুল। এসময় অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফারের হাতে ১০ হাজার টাকা দেখতে পায় সে। ওই টাকার লোভ সামলাতে না পেরে তা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পেছন থেকে অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফারের মুখ চেপে ধরে আনারুল। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য উপায়ান্তর না পেয়ে আনারুলের ডান হাতে কামড় দেন সাইদা গাফ্ফার। এসময় আনারুল গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ^াসরোধে সাইদা গাফ্ফারকে হত্যা করে। পরে নিহতের হাত থেকে টাকাসহ মোবাইল দুইটি ছিনিয়ে নেয় সে। নিহতের লাশ পাশর্^বর্তী ঝোপের ভিতর লুকিয়ে রেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় আনারুল।

এদিকে ঘটনার রাতে নিহতের ছোট মেয়ে অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী মেয়ে হেমেল অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফারের মেসেঞ্জারে মেসেজ দেন। ওই মেসেজ সিন না হওয়ায় পরদিন সকালে মায়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে কোন সাড়া পান নি হেমেল। অপরদিকে নির্মাণাধীন বাড়ির ঠিকাদার আনোয়ার অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফার নিখোঁজের বিষয়টি জানায় নিহতের ভাইকে। পরে তারা অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফারের ভাড়া বাসায় গিয়ে তাঁর খোঁজ পান নি। এসময় বাসার দরজা খোলা দেখতে পান তারা। খবর পেয়ে অধ্যাপক সাইদার ছেলে ও মেয়ে সাদিয়া আফরিন রাতেই কাশিমপুরে এসে মাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। স্বজনরা বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান না পেয়ে তাঁর মেয়ে সাহিদা আফরিন বুধবার কাশিমপুর থানায় একটি সাধারণ ডাইরী করেন।

জিএমপি’র কাশিমপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শেখ মিজানুর রহমান জানান, সাধারণ ডায়রী করার পর নির্মাণাধীন বাড়ির প্লটে গিয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হয়। তদন্তের নানা তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্লটে কর্মরত রাজমিন্ত্রীর যোগালী আনারুলকে গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর থেকে বৃহষ্পতিবার রাতে আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফারের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সাউদ ইফখার বিন জহির থানায় মামলা দায়ের করেন।