গাজীপুরে ঝালমুড়ির বিক্রেতা সেজে মুড়ির সঙ্গে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে অটোরিক্সা চালক হুমায়ুনকে ধাক্কা দিয়ে মাজারের পুকুরে ফেলে হত্যা করে তার অটোরিক্সাটি ছিনতাই করে ছিনতাইকারীরা। চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস এ খুনের রহস্য উদঘাটন করতে তদন্তে নেমে ওই চক্রের সন্ধান পেয়েছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে জিএমপি’র ডিসি (উত্তর) এর সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন উপ-কমিশনার ইলতুৎমিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- আলমগীর (৩০), শামসুল (৩২), মোঃ হাফিজুর রহমান ওরফে টুকু (৩৬), আল মামুন সদার ওরফে আল আমিন (৩৫) ও রফিকুল ইসলাম (৩৪)।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, ঝালমুড়ি ও চা বিক্রেতা সেজে অভিনব কায়দায় ছিনতাই করে আসছিল একটি ছিনতাইকারীর চক্রের সদস্যরা। ওই চক্রের সদস্যরা অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে প্রথমে অটোরিকশাকে টার্গেট করতো। পরে চালকের সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্পর্ক করে কৌশলে ঝালমুড়ি বা চায়ের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে চালককে অচেতন করে ছিনিয়ে নেয়া হত অটোরিক্সা। সম্প্রতি অটোরিক্সা চালক হুমায়ূন কবির (৩৮) হত্যার ঘটনায় তদন্তে নেমে এ চক্রের সন্ধান পেয়েছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।

তিনি আরো জানান, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মহানগরীর সালনা এলাকা ছিনতাইয়ের জন্য হুমায়ূন কবিরের অটোরিক্সাকে টার্গেট করে। পরে রাতে ছিনতাইকারী দলের সদস্য আল আমিন ঝালমুড়ি বিক্রেতা সেজে সালনা ব্রিজের কাছে অবস্থান করতে থাকে। একপর্যায়ে ভিকটিম অটোরিক্সা চালক হুমায়ুন তার কাছ থেকে ঝালমুড়ি কিনতে গেলে আল আমিন কৌশলে মুড়িতে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেয়। হুমায়ুন ওই মুড়ি খাওয়ার কিছু সময়ের মধ্যে ছিনতাইকারী চক্রের অপর সদস্য শামসুল ও টুকু যাত্রী বেশে অটোরিক্সাটি ভাড়া নিয়ে কোনাবাড়ি এলাকায় যায়। সেখানে চালক অচেতন হয়ে গেলে ছিনতাইকারীরা অটোরিক্সার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাশিমপুর থানাধীন লোহাকৈর এলাকার দিকে চলে যায়। পথে রাতে চালক হুমায়ূনকে রাস্তার পাশে ফেলে তারা অটোরিক্সাটি নিয়ে পালিয়ে যায়। রাত ১২টার দিকে ছিনতাইকারীরা চালক হুমায়ুনকে দেখতে ঘটনাস্থলে আসে। এসময় তারা হুমায়ুনকে লোহাকৈর এলাকায় একটি চায়ের দোকানে বসে থাকতে দেখে। পরে রাতে ওই এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেলে তারা অটো চালক হুমায়ুনকে কৌশলে স্থানীয় মাজারের পুকুর পাড়ে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে ঘটনার তিনদিন পর শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) অটোচালক হুমায়ুনের লাশ পুকুরে ভেসে উঠলে পুলিশ তা উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। লাশটি প্রথমে অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করা হয়। পরে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে স্বজনরা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে হুমায়ুন কবিরের লাশ সনাক্ত করেন। ক্লুলেস এ ঘটনার রহস্য উদ্ধারে তদন্তে নামে পুলিশ। লাশের পরিচয় সনাক্তের পর পুলিশ নিহতের স্বজন ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্ত ছিনতাইকারী দলের আলমগীর ও শামসুলকে কোনাবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বরিশালের উজিরপুর থেকে অপর আসামি টুকু ও আল আমিনসহ অপর আসামী রফিকুলকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সঙ্গে স¤পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে ঘটনার বর্ননা দিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা পেশায় অটোচালক ও ছিনতাইকারী। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ভিক্টিমের মোবাইল, ছিনতাইকৃত অটোরিক্সা, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সিএনজি, বিভিন্ন সময়ে লুণ্ঠিত বিভিন্ন ইজিবাইকের খন্ডিত অংশসহ ঝাল-মুড়ি বিক্রির উপকরণ, অটোরিক্সার যন্ত্রাংশ খোলার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও রং করার উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে।

গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন দেশীপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় স্বপরিবারে থাকতেন ভিকটিম হুমায়ূন কবির (৩৮)। তিনি রংপুর জেলা সদর থানার কাটাবাড়ি এলাকার মৃত রুস্তম আলীর ছেলে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপ কমিশনার রেজওয়ান আহমেদ, সহকারি কমিশনার মোঃ বেলাল হোসেন, রিপন চন্দ্র সরকার, কাশিমপুর থানার ওসি মাহবুবে খোদা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।