মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট রেলক্রসিংয়ে ট্রেন-ড্রাম ট্রাক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২২ জুন) রাত ১ টা ১০ মিনিটে বালু ভর্তি ড্রাম ট্রাককে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী মহানগর তূর্ণা নিশিতা ধাক্কা দিলে ড্রাম ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-২২-৩৮২৬) দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে ড্রাম ট্রাকের হেলপার নিহত ও চালক আহত হয়েছে। কিন্তু তখনও ঘুম ভাঙ্গেনি গেটম্যান আনোয়ার হোসেনের। নিহত হেলপার মোঃ মুরসালিন (১৮) লক্ষিপুর জেলার সদর উপজেলার আন্ধার মানিক গ্রামের শামসুল আলমের পুত্র এবং আহত ড্রাম ট্রাক চালক মোঃ শাহ আলম (৫৫) একই জেলার সদর উপজেলার বান্জনগর গ্রামের মৃত সুজা মিয়ার পুত্র।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার রাত আনুমানিক সোয়া একটার দিকে করেরহাট থেকে আসা বালু ভর্তি ড্রাম ট্রাক গেটম্যান বিহীন বারইয়ারহাট রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী মহানগর তূর্ণা নিশিতা ধাক্কা দিলে ড্রাম ট্রাক দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং চালক ও হেলপার আহত অবস্থায় ছিটকে পড়ে। আহত চালক- হেলপার’কে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (মস্তান নগর) ভর্তি করার পর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সোয়া তিনটার দিকে হেলপারের মৃত্যু হয়। গেটম্যানের দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে অর্থাৎ ঘুমের মধ্যে থাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটায় দুর্ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা গেটম্যান আনোয়ার হোসেন’কে অবরুদ্ধ করে রাখে। এবিষয়ে জানতে চাইলে চিনকী আস্তানা রেলওয়ে ষ্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম জানান, ঘটনার সময় দায়িত্বরত ছিলেন ষ্টেশন মাস্টার আবু জাফর মোহাম্মদ ইলিয়াস। পরবর্তীতে তাকে কল দিলে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সীতাকুণ্ড জিআরপি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) খোরশেদ আলম জানান, বারইয়ারহাট রেলক্রসিংয়ে ট্রেন-ট্রাক সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নিহত ড্রাম ট্রাকের হেলপার ও আহত চালকের পরিচয় সনাক্ত করে তাদের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে এবং আইনী প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে, সেই সাথে গেটম্যানের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বারইয়ারহাট রেলক্রসিংয়ে ৩ জন গেটম্যান যথাক্রমে মোশারফ হোসেন, মোঃ ইয়াকুব ও আনোয়ার হোসেন দায়িত্ব পালন করে। তবে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক একজন ৪ ঘন্টা করে ৮ ঘন্টা পরপর ডিউটি করার কথা থাকলেও তাঁরা নিজেদের সুবিধার্থে ডিউটি নিজেরা আপোষে বন্টন করে বলে অভিযোগ উঠেছে। যার ফলে গেটম্যান বিহীন ট্রেন চলাচল করতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বারইয়ারহাট রেলক্রসিংয়ে নিয়োজিত গেটম্যানের দায়িত্বহীনতা নিয়ে অভিযোগ তুলেন এবং বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা করেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর ভোররাত ৫ টা ৫ মিনিটে বারইয়ারহাট রেলক্রসিংয়ে ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামমুখী বিজয় এক্সপ্রেসের সঙ্গে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়িগামী যাত্রীবাহী এস.আলম পরিবহনের একটি বাস (চট্টমেট্রো-ব-১১-০৭৩০) ভয়াবহ ট্রেন দূর্ঘটনার শিকার হয়ে ২ জন নিহত ও ২২ জন আহত হলে তৎকালীন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিভিশনাল ট্রাফিক অফিসার ফিরোজ ইফতেখারকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্ত শেষে দূর্ঘটনায় গেটম্যানের দায়িত্বে অবহেলার কথা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন এই তদন্ত কর্মকর্তা। তবে এসব ঘটনায় দৃশ্যমান কোন শাস্তির ব্যবস্থা না হওয়ায় রেলওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদেরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায় এসব দাপুটে গেটম্যানরা

আকতার হোসেন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি