ধানের উৎপাদন ঠিক রেখে তৈল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে শস্যবিন্যাস উন্নয়নের যৌথ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে আগামী তিন বছরেই তেলের আমদানী ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। গাজীপুরে বারি’র প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সের সভাকক্ষে বৃহষ্পতিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত শস্য বিন্যাস উন্নয়ন ও ফসলের জাত নির্বাচন পর্যালোচনা কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ব্রি’র মহাপরিচালক বলেন, ধান আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য। তাই ধান নির্ভর খাদ্য নিরাপত্তার কোন ব্যতয় ঘটানো যাবেনা। সেটি নিশ্চিত রেখে অন্যান্য ক্যাশফসল উৎপাদন করার জন্য আমরা ব্রি ও বারি যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আশাকরি এই পদক্ষেপের ফলে উফশী ধানের শস্য বিন্যাসে সরিষা ও পেঁয়াজসহ অন্যান্য দামি ফসলের আবাদ অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে দেশের মোট তেলের চাহিদার মাত্র ১২ ভাগ পূরণ হয় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। অবশিষ্ট ৮৮ শতাংশ তেলের চাহিদা আমদানী নির্ভর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই যৌথ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে আগামী তিন বছরেই তেলের আমদানী ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

ব্রি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. মো: খালেকুজ্জামানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টটিউিটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রি’র পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মোঃ আবু বকর ছিদ্দিক, পরিচালক (তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র) ড. মো. আবদুল লতিফ আকন্দ এবং বারি’র পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ) ড. ফেরদৌসি ইসলাম। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্রি’র রাইস ফার্মিং সিস্টেম বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বিভাগীয় প্রধান ড. মুহম্মদ নাসিম।

কর্মশালায় বারি’র মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় ও সরকারের নির্দেশনা হচ্ছে ধান যেহেতু আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য সেহেতু ধানের উৎপাদন অক্ষুন্ন রেখে অন্যান্য দামি ফসল যেমন- তৈলবীজ, ফলমূল ও শাক সবজি চাষ বাড়াতে হবে, যাতে চালের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলেও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি। কেননা করোনাকালে আমরা দেখেছি অনেক দেশ খাদ্য আমদানীতে হিমশিম খেয়েছে। টাকা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় আমদানী করা যায় না। তাই আমদানী নির্ভরতা কমিয়ে প্রয়োজনীয় সকল ফসলে আমাদের স্বয়ংভর হতে হবে। আমরা সে লক্ষ্যে ব্রি-বারি এই যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি’র রাইস ফার্মিং সিস্টেম বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: ইব্রাহিম এবং বারি’র সরেজমিন গবেষণা বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: মাজহারুল আনোয়ার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন শেষে উভয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে দেশের ১৪টি অঞ্চলের শস্য বিন্যাসে আরো কি কি ফসল অন্তর্ভূক্ত করা যায় সে বিষয়ে ৭টি দলগত কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়।

যৌথ কর্মশালায় ব্রি ও বারি’র বিজ্ঞানীরা জানান, প্রচলিত শস্য বিন্যাসে আধুনিক উফশী ধানের জাতের পাশাপাশি তৈল ফসলসহ অন্যান্য ক্যাশক্রপ বাদামি ফসল সন্নিবেশের ক্ষেত্রে কৃষকদের সহযোগিতা করতে যৌথভাবে কাজ করবে।

ব্রি’র রাইস ফার্মিং সিস্টেমস বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত এ কর্মশালা ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানবৃন্দ, আঞ্চলিক কার্যালয়ের বিজ্ঞানীবৃন্দ ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগ সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীবৃন্দ অংশ গ্রহণ করেন।