বিচারের রায় মানতে দেরি হওয়ায় ঘুমন্ত লোককে তুলে এনে ইউনিয়ন পরিষদের রুমে ঢুকিয়ে দরজাজানালা বন্ধ করে নির্মম নির্যাতনসহ ফাকা স্টাম্পের স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বড়খাতা ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে এমদাদুল হক নামে এক ব্যবসায়ীকে চায়ের দোকান থেকে তুলে এনে মারপিট করাসহ ফাঁকা স্টাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ উঠেছিল।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাতীবান্ধা থানার ওসি।
এর আগে ২৯ জুন সকালে সাড়ে ১০টার দিকে ঐ উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনা ঐ ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী সহ ৪ জন গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্যাতিত জহুরুল হক।

জহুরুল হক ওই ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবী এলাকার ২নং ওয়ার্ডের জামাল উদ্দিনের পুত্র।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামাল সোহেল ১নং বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যান আজগর আলীর পুত্র।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ওই উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড পশ্চিম সারডুবি এলাকার আপন ভাই জহুরুল হকের সাথে নজরুল ইসলামের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলছিলো। এবিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামে পক্ষে রায় দেয়। বৈরী আবহাওয়া ও বর্ষাবাদলের কারণে সেই বিচারে রায় মানতে দেরি হয় জহুরুল হকের। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বুধবার (২৯ জুন) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ৪-৫ জন গ্রাম পুলিশ দিয়ে বাড়ি থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় জহুরুল হককে তুলে ইউনিয়ন পরিষদে নেন ইউপি চেয়ারম্যান। গ্রাম পুলিশের সঙ্গে আসতে অস্বীকৃতি জানালে বাড়ির উঠানে জহুরুল হককে চড়থাপ্পড় মারেন দুজন গ্রাম পুলিশ। পরে ঐদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে তাকে ঢুকিয়ে দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামাল সোহেল। এসময় বাঁশের লাঠি দারা জহুরুল হককে পঙ্গু করে দেয়ার জন্য তার হাত পায়ের নক ও আঙ্গুলসহ বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন করা হয়। এতে প্রায় জ্ঞান হারার উপক্রম হয়ে পরে জহুরুল হক। এসময় জহুরুল হক কান্নাকাটি করলে ঐ ইউপি চেয়ারম্যান প্রাণনাশসহ বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিয়ে নিজের দোষ ঢাকতে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক ফাঁকা স্টাম্পে স্বাক্ষর নেয়। সেখানে থেকে মুক্তি পেলে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে ভর্তি করায় পরিবারের লোকজন। পরে ঐদিন রাতে ছেলের মাধ্যমে ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামাল সোহেলকে প্রাধান আসামী করে ৩ জন গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয় জহুরুল হক।

নির্যাতনের স্বীকার জহুরুল হক সাংবাদিকদের সামনে কাদতে কাদতে বলেন, আমি চোর নই, ডাকাত নই, মাদক ব্যবসায়ী নই, বাটপার নই অথচ বিনা অপরাধে ঘুম থেকে তুলে এনে আমাকে পাশবিকভাবে নির্যাতন করেছে ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল এবং ৪ জন গ্রাম পুলিশ। এটা কোন দেশ, এখানে কি কোন আইনকানুন নেই। আমি চেয়ারম্যানসহ ঐ গ্রাম পুলিশদের উপযুক্ত শান্তির দাবী করেন ভুক্তভুগি।

তবে এবিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামাল সোহেল বলেন, আমি কিছুই জানিনা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্টাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।

উল্লেখ্য- এর আগেও গত বছরের জুলাই মাসে বড়খাতা বাজারের একটি চায়ের দোকান থেকে এমদাদুল হক নামে এক ব্যবসায়ীকে ৩ জন গ্রাম পুলিশ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে ধরে এনে মারপিট করাসহ ১০টি জমির দলিলে (স্ট্যাম্প) স্বাক্ষর নেয়া এবং বড়খাতা বাজারে ব্যবসা করতে না দেয়ার জন্য প্রকাশ্যে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছিলো ঐ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এবিষয়ে ঐ সময়ে এমদাদুল হক বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সোহেলের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় দুটি পৃথক পৃথক অভিযোগ দাখিল করেছিলেন।

হাতীবান্ধা থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি এরশাদুল আলম বলেন, বড়খাতা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামাল সোহেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে জহুরুল হক। বিষয়টি তদন্ত পুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।