মাদারীপুরের সদর উপজেলার ১২১নং চরহোগল পাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক নগদ এজেন্টের বিরুদ্ধে। উপবৃত্তির টাকা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার ১২১নং চরহোগল পাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৩ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী হতে সরকারের পক্ষ থেকে ১৭৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৯৫০ টাকা এবং প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ১৪৫০ টাকা মোবাইল একাউন্টে পাঠিয়ে দেয়। এ উপবৃত্তির টাকা পেতে অভিভাবকদের প্রত্যেককে খুলতে হয়েছে ‘নগদ’ নামের মোবাইল ব্যাংকিং-এর অ্যাকাউন্ট। আর এই সুযোগকে কাজে লাগায় বিদ্যালয়ের পাশে বাংলাবাজার এলাকার নগদের এজেন্ট আবুল হোসেন খলিফা (৩৫)। তিনি একাউন্ট খোলার সময় কৌশলে জেনে নেন নগদের সবার গোপন পিন নাম্বার। এরপর অধিকাংশ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও স্কুল ড্রেসের টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন । এ ঘটনার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শালিসের মাধ্যমে নগদ এজেন্ট আবুলকে জরিমানা করেন এবং শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য বলেন। এজেন্ট আবুল কয়েকজনের টাকা ফেরত দিলেও অনেক শিক্ষার্থীকে এখন পর্যন্ত কোন টাকা প্রদান করেনি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আবুলের শাস্তি দাবী জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বিদ্যালয় সূত্র জানা গেছে, ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত ১২১নং চর হোগলপাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮৫ সালে জাতীয়করণ করা হয়। দুই বছর ধরে বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি ও স্কুলের ড্রেসের টাকা আসছে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে।

বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নাদিয়ার মা সাফিয়া বেগম জানান, আমার মোবাইলে টাকা আসছে কিন্তু আমি কোন টাকা পায়নি। পরবর্তীতে মাদারীপুর নগদ এর অফিসে গেলে তারা জানায় আমার মোবাইলে টাকা আসছিল কিন্তু টাকা কেউ উঠিয়ে নিয়ে গেছে। আমি আমার মেয়ের টাকা ফেরত চাই।
শিক্ষার্থী রোহান ও শ্রাবনীর ফুপু চায়না বেগম জানান, আমার ভাতিজার টাকা আসেনি আর ভাতিজির এক হাজার নয়শত টাকার মধ্যে এক হাজার পেয়েছে। একজনের কিছু টাকা দিয়েছে, আরেকজনের টাকা কৌশলে আত্মসাৎ করেছে। এই ঘটনার বিচার চাই।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের বই, খাতা ও স্কুল ড্রেস কেনার জন্য নগদ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা দিয়েছে সরকার। সেই টাকা এজেন্ট আবুল আত্মসাৎ করেছে বলে কয়েকজন অভিভাবক স্কুলে এসে আমাদের জানায়। পরবর্তীতে আমরা এই ঘটনার কথা স্থানীয় ঝাউদি ইউপি চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম আবুলকে জানালে তিনি শালিসের মাধ্যমে উক্ত টাকা ফেরত দেয়ার জন্য এজেন্টকে বলেন।

মোবাইল ব্যাংকি এর মাধ্যমে কিছু টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত নগদের এজেন্ট আবুল খলিফা বলেন, আমি কিছু টাকা নিয়েছিলাম। আমার ভুল হয়েছে। এ জন্য আমি ক্ষমা চাই। পরে ইউপি চেয়ারম্যানের কথা মতে কিছু টাকা আমি দিয়ে দিয়েছি।
ঝাউদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম আবুল বলেন, ১২১নং চরহোগল পাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা নিয়ে কিছুটা প্রতারণা হয়েছে। বিষয়টি আমি জানতে পেরে স্থানীয়ভাবে শালিস এর মাধ্যমে অভিযুক্ত নগদ এজেন্টকে জরিমানা করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এখনও যদি কোন শিক্ষার্থী টাকা না পায় তা হলে তাদের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা আমি গ্রহণ করবো।

মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত ) সৈয়দাতুন নেছা রুপা বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং- নগদ এজেন্টের এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টাকা যে প্রতারক হাতিয়ে নিয়েছে তার এজেন্ট বাতিল করা হবে। আগামীতে আমরা যখন উপবৃত্তির টাকা দিব তখন আমরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বলে দিবো আপনারা অন্য কোন এজেন্টের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করবেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শালিসের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরত দেয়ার জন্য বলেছে। আমার জানামতে অনেক শিক্ষার্থীকে টাকা ফেরত দিয়ে দিছে।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন বলেন, এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী বা তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে কোন অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।

সাবরীন জেরীন,মাদারীপুর ।