আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে ফরিদপুরে সন্ত্রাস এবং দলের মধ্যে বিভক্তি তৈরির গুরুতর অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগেরই ফরিদপুর জেলা সভাপতি শামীম হক। দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কেন্দ্রীয় ওই নেতার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন।

তবে কেন্দ্রীয় ওই নেতার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনলেও তার নাম উল্লেখ করেননি শামীম হক।

বুধবার (১৭ আগস্ট) রাতে শহরের আলিপুরের শেখ রাসেল স্কয়ারে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় মঞ্চে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও এফবিসিআই’র সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি এ কে আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

‘আপনি কেন্দ্রীয় নেতা, আপনি সন্ত্রাস শুরু করেছেন। আপনি তো আমাকে চিনেন নাই এখনো। এইগুলা আমি ফরিদপুরে হতে দেব না।’ ক্ষুব্ধকণ্ঠে এভাবেই ওই নেতার কঠিন সমালোচনা করেন শামীম হক।

তিনি বলেন, ‘আপনারা দূরে থেকে নিজের স্বার্থের জন্য যা করছেন, মনে করেছেন আমরা কিছু জানি না। আমরা সব জানি। সন্ত্রাস আপনারা শুরু করেছেন।’

দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাকে সভাপতি বানিয়েছেন উল্লেখ করে শামীম বলেন, ‘অন্য কেউ আমাদের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি বানায় নাই। শেখ হাসিনা বানিয়েছেন। তিনি যেদিন বলবেন, সেদিনই চলে যাবো।’

ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনিরুল হাসান মিঠুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে শামীম হক প্রধান অতিথি হিসেবে এ বক্তব্য রাখেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ওই নেতার প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আমি এই পদ থেকে পদত্যাগ করবো, আপনাকেও পদত্যাগ করতে হবে। ঘুঘু দেখেছেন তবে ঘুঘুর ফাঁদ দেখেন নাই। শেখ হাসিনার যারা প্রতিনিধি তাদের নেতৃত্বেই ফরিদপুরের ৯টি উপজেলা চলবে।’

ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ সবাই জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখে একসাথে মিলেমিশে কাজ করছে। আমাদের কাজ করতে দিন, ষড়যন্ত্র করবেন না। এখানে আমার ছেলের বয়সীরা ছাত্রলীগ যুবলীগ শ্রমিক লীগ করে, তাদের মাঝে আপনারা বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন এটা স্পষ্ট। আপনি জাতীয় নেতা, কেন্দ্রীয় নেতা যাই হোন, একবার চিন্তা করেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে আপনাদের কী হবে?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযানের কারণে ফরিদপুর থেকে হেলমেট বাহিনী, হাতুড়ি বাহিনী, টেন্ডারবাজ বিতাড়িত হয়েছে উল্লেখ করে শামীম হক বলেন, ওই সময়ে দলের নেতাকর্মীদের ওপরেও হামলা-মামলা হয়েছিলো। তবে সবাই এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন না। অনেককে বাধ্য করা হয়েছিলো। নইলে মামলা-হামলার শিকার হতে হয়েছে।

ফরিদপুরে এফবিসিসিআই’র সভাপতি এ কে আজাদের বহরেও হামলা হয়েছে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে।

বিরোধী দলে থাকাকালে ফরিদপুর শহরে আওয়ামী লীগ খুব শক্তিশালী ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, একবার চিন্তা করেন শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলে আমরা কেউ বাঁচবো না। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য থাকবে না। তাই শেখ হাসিনা যেভাবে নির্দেশ দেন সেভাবেই দল করেন। যারা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করবেন তাদের জবাবদিহি করতে হবে।

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফ, সাবেক সহ-সভাপতি এ কে আজাদ, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম মেম্বার ফারুক হোসেন, পৌর মেয়র অমিতাভ বোস, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান মিঠু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক শওকত আলী জাহিদ প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ফরিদপুরে ছাত্রলীগ পরিচয়ধারী এক যুবককে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার সাথে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকর্মী জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়। এরা এখন দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের সাথে যোগাযোগ রেখে চলছেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে শহরে।