গাজীপুরে প্রাইভেটকারের ভিতর থেকে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধারের ঘটনায় শুক্রবার রাতে গাছা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত শিক্ষক জিয়াউর রহমানের মেঝো ভাই আতিকুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন। এদিকে নিহতদের ময়না তদন্ত ও জানাযা শেষে বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহের গ্রামের বাড়ির পারিবারিক গোরস্থানে জিয়াউর রহমানের বাবার কবরের পাশে তাদের দাফন করা হয়েছে। পুলিশ এখনো পর্যন্ত তাদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে পারে নি।

নিহতরা হলেন, গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন কামারজুরি এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে এ,কে,এম, জিয়াউর রহমান মামুন (৫১) তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫)। এদের মধ্যে জিয়াউর রহমান গাজীপুরের টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং তার স্ত্রী জলি টঙ্গী বাজার এলাকার আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পদে কর্মরত ছিলেন।

জিএমপি’র গাছা জোনের সহকারী কমিশনার মাকসুদ উর রহমান জানান, প্রাইভেটকারের ভিতর থেকে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধারের ঘটনায় শুক্রবার রাত পৌণে ৯টার দিকে গাছা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত শিক্ষক জিয়াউর রহমানের মেঝো ভাই কামারজুরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আতিকুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব এসআই নাদির-উজ-জামানকে দেওয়া হয়েছে। মামলায় গত বুধবার বিকেলে প্রাইভেটকার যোগে বাড়ি ফেরার পথে ওই শিক্ষক দম্পতি নিখোঁজ হওয়া থেকে শুরু করে পরদিন ভোরে তাদের লাশ উদ্ধার এবং ময়না তদন্ত শেষে লাশ দাফনের কথা পর্যন্ত বর্ণনা করা হয়েছে।

জিএমপি’র গাছা থানার ওসি নন্দলাল চৌধুরী বলেন, মামলা দায়েরের আগে বৃহষ্পতিবার গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে তাদের লাশ রাতে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাদের মৃত্যুর কোনো ক্লু এখনো পাওয়া যায় নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পরই তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। তবে এ শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত কাজ শুরু করেছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মো. শাফি মোহাইমেন জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে লাশ দুটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। এসময় দুইজনের ফুসফুস ও কিডনিতে প্রায় একই রকম লক্ষণ পাওয়া গেছে। তাদের প্রত্যেকের ফুসফুস ও কিডনিতে জমাট রক্ত পাওয়া গেছে। এটা সাধারণত খাবারে বিষক্রিয়া কিংবা অন্য কোনো কারণেও হতে পারে। এ ছাড়াও নিহত নারীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাই তাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হতে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকাস্থ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

নিহত জিয়াউর রহমানের ভগ্নিপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ জানান, বৃহষ্পতিবার ময়নাতদন্ত সম্পন্নের পর তিন দফা জানাজা শেষে রাত ২টার দিকে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানাধীন দড়ি কাঁঠাল এলাকার পারিবারিক গোরস্থানে জিয়াউর রহমানের বাবার কবরের পাশে এ দম্পতিকে দাফন করা হয়।

প্রসঙ্গতঃ বুধবার বিকেলে বিদ্যালয়ের কাজ শেষে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার যোগে গাজীপুর মহানগরীর কামারজুরী এলাকার বাসায় ফিরছিলেন টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ,কে,এম, জিয়াউর রহমান মামুন (৫১) তার স্ত্রী আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫)। পথে তারা নিখোঁজ হন। দীর্ঘ সময়ে বাসায় না ফেরায় স্বজনরা বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বৃহষ্পতিবার ভোরে বাড়ির কাছে গাছা থানাধীন বড়বাড়ির বগারটেক এলাকায় হারবাইদ-বড়বাড়ি সড়কের পাশে থেমে থাকা প্রাইভেটকার থেকে ওই দম্পতির লাশ উদ্ধার করা হয়। এসময় তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে লাশ উদ্ধারের সময় তাদের মুখ দিয়ে লালা ঝরছিল।