চট্টগ্রামের স্থানীয় মিডিয়াতে আজ প্রকাশিত হল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে নিয়োগ বাণিজ্যের নতুন গল্পকথা। নিয়ম না মেনেই ১১৮ জনকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে-এ (কেজিডিসিএল) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়ম নীতির কোন তোয়াক্কাই করা হয়নি নিয়োগের ক্ষেত্রে, এমনটাই আজ মিডিয়াতে প্রকাশিত হলো।

মিডিয়াতে প্রকাশ, আসনভিত্তিক কোনো জেলার কোটা না থাকার পরও ১৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম থেকেই। নিয়োগপ্রাপ্তদের সবাই কেজিডিসিএল নিয়োগ কমিটির কর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজন। তবে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগ কমিটির বিরুদ্ধে সম্প্রতি এসব অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।

অপরদিকে, প্রতিষ্ঠানটিতে ‘সহকারী ব্যবস্থাপক (লাইব্রেরি)’ ও ‘প্রকৌশলী (টেলিকমিউনিকেশন)’ নামের কোনো পদের অস্থিত-ই নেই। তারপরও এই দুটো পদে চারজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের একটি সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য মোতাবেক অভিযোগ পাওয়া গেছে, ২০২০ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে ১১৮টি বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগের কথা বলা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আসনভিত্তিক কোনো ধরনের কোটার নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র চট্টগ্রাম জেলা থেকেই নেওয়া হয়েছে কর্মকর্তা পর্যায়ে ১৯ জন। এরা সবাই নিয়োগ কমিটির কর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজন ও পছন্দের লোক। নিয়োগ পাওয়া সবাইকে নিয়োগপত্রও দেওয়া হয়। গত ২৩ আগস্ট বিভিন্ন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ১১৮ জন কর্মকর্তা কর্মস্থলে যোগ দেন।

এছাড়া আরো জানা গেছে, ১২ বছর ধরে কেজিডিসিএলের চট্টগ্রামের তিন অফিসে লাইব্রেরি নেই। এরপরও একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সহকারী ব্যবস্থাপক (লাইব্রেরি) পদে। একইভাবে প্রকৌশলী (টেলিকমিউনিকেশন) নামে প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো পদ না থাকলেও ওইখানে নিয়োগ দেওয়া হয় তিনজনকে।

এই নিয়োগ কমিটির সদস্যদের মধ্যে মূল ভূমিকায় ছিলেন কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএ মাজেদ এবং সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. ফিরোজ। অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করায় এই দুজনের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১৭ মে প্রতিবেদন দেন পেট্রোবাংলার চার সদস্যের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক পেট্রোবাংলা পরিচালক (পরিকল্পনা) আলী ইকবাল মো. নূরুল্লাহ। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরও তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া ২০২২ সালের ১৫ জুলাই ১১৮ জনের নিয়োগের নানা অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে।

অভিযোগে সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে ১৪৪তম সভায় নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন হয়। ২০২০ সালের ২৯ জুলাই সংবাদপত্রে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কেজিডিসিএল। ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। ২০২২ সালের ৩০ মে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে নিয়োগ কমিটির পকেট বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদায় ১১৮টি বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়।

এই নিয়োগের দ্বিতীয় শ্রেণীর ১০ম গ্রেডে অন্তত ৩৮ জন জনবলের ক্ষেত্রে কোটাভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি। অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এসব নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মাজেদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে এসএমএস দিয়েও তার কাছ থেকে সাড়া মেলেনি।