আমাদের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অভ্যন্তরে অনেক কিছুই হয়। এ নিয়ে বহু বার বহু মিডিয়াতে সংবাদ ছাপা হয়েছে। এমন না যে এতে করে ক্রীড়া পরিষদের শীর্ষ কর্তাদের তেমন কোন সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এখন বিষয়টি অনেক বড় আকার ধারণ করেছে। কারণ ক্রীড়া পরিষদের এক চোঁখা নীতির কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়নদো এসোসিয়েশন ‘বঙ্গবন্ধুর নামে টুর্ণামেন্ট’ ঘোষণা দিয়ে, পরে লিখিত ভাবে সচিব মহোদয়ের বরাবরে আবেদন করেও ভেনু্ পায়নি!

বিশ্বে, তায়কোয়নদো খেলাটি দুটি ধারায় বিভক্ত, যার খেলার নিয়ম কানুন ও সম্পূর্ণ ভিন্ন, বাংলাদেশেও এখন দুইটি জাতীয় তায়কোয়নদো ক্রীড়া সংস্থা বা ফেডারেশন বা এসোসিয়েশন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও খেলাধুলার বা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। ২০১২ই়ং সালে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়নদো এসোসিয়েশন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুমোদন লাভ করেন। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়নদো অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ব নাম অর্থাৎ ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত উক্ত সংস্থার নাম ছিল বাংলাদেশ তায়কোয়নদোঊ ফেডারেশন যা ইন্টারন্যাশনাল তায়কোয়নদো ফেডারেশন অনুমোদিত (ITF) ITF ২২ মার্চ ১৯৬৬ ই়ং তারিখ দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুমোদনের পূর্ব হতে এবং অনুমোদনের পর হতে আলাদা ভাবেই নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

অথচ এই বাংলাদেশে অরিজিনাল তায়কোয়নদোর জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার অর্থাৎ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়নদো এসোসিয়েশনের সঙ্গে ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক বিমাতা সুলভ আচরণ করছেন। এর মুলে কি? তদন্ত করে জানা যায়, ডাব্লু.টি (বিশ্ব তায়কোয়ানডো) ডাবলু.টি ১৯৭৩ সালে আইডি থেকে আলাদা হয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। ডব্লিউ টি অনুমোদিত, বাংলাদেশ তায়কোয়ানডো ফেডারেশন যেটা , সেই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রানার না-কি প্রচন্ড দাপট ক্রীড়া পরিষদে। সে কারণেই ক্রীড়া পরিষদের কর্তা ব্যক্তিরা ২০১২ ই়ং সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুমোদন দেয়া বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়নদো এসোসিয়েশনের সাথে বিমাতা সুলভ আচরণ করে বঙ্গবন্ধু’র নামে ‘বঙ্গবন্ধু ১৩তম ঢাকা আইটিএফ তায়কোয়নদো প্রতিযোগিতা’র ভেনু্-ই দিলেন না ক্রীড়া পরিষদের পুরাতন ভবনের জিমনেসিয়ামটি।

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়নদো এসোসিয়েশনের মহাসচিব, সোলায়মান সিকদারের ভাষ্য মতে, ‘আমি সচিব স্যারের বরাবরে ভেনু্র জন্য লিখিত চিঠি জমা দিয়েছি ১লা সেপ্টেম্বর ২০২২ এ। ২৮-৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ অবদি আমার টুর্ণামেন্ট অনুষ্ঠিত হবার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি জানি না আমার ভেনু কোথায়? ছাত্র-ছাত্রী ও খেলোয়াড়গণ আমাকে ফোন দিয়ে জানতে চাচ্ছে খেলা কখন শুরু হবে? আমি কোন জবাব দিতে পারছি না। এর মানে কি? আমি বাংলাদেশে অরিজিনাল তায়কোয়নদোর প্রবর্তক এবং বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়নদো এসোসিয়েশন এর মহাসচিব, বাংলাদেশে অরিজিনাল তায়কোয়নদোর প্রচার প্রসার ও উন্নয়ন কার্যক্রম বা আমাদের জাতীয় তায়কোয়নদো ক্রীড়া সংস্থার মেরুদন্ড ভেঙে ফেলা । আলাদা কেন আমার বা আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ, কেন? তাহলে তো আমার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়নদো এসোসিয়েশনের নামই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুমোদন বা রেজিস্ট্রেশন করার দরকার ছিল না।’

এ প্রসঙ্গে জানতে মুঠোফোনে সরাসরি ক্রীড়া পরিষদের ভেনু দেয়ার দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক তাসলিমা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক বার্তাকে বলেন, কেন আমি তো তাকে (সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান সিকদার) ভেনু্ দিয়েছি মিরপুরে ইনডোরে। সেখানকার ইনর্চাজকেও আমি বলে দিয়েছি।’ পাল্টা প্রশ্ন করা হয় মিরপুরে কি ক্রীড়া পরিষদের ভবনের মতো মিডিয়া কাভারেজ পাওয়া সম্ভব? তাসলিমা আক্তার প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেলেন। পরে এই সহকারী পরিচালক জানালেন, মিরপুরের ভেনু-র জন্য সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান সিকদারকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

কিন্তু আসল ঘটনা অন্য রকম, কারণ সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান সিকদারে ফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান বঙ্গবন্ধু ১৩তম ঢাকা তায়কোয়নদো প্রতিযোগিতা আয়োজনের কোন চিঠি তিনি ক্রীড়া পরিষদের কাছ থেকে পাননি। তাহলে বিষয়টি কি দাঁড়ালো ? প্রশ্ন করা হলে সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান সিকদার পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরাই বলুন, এটা আসলে কি হচ্ছে? আমার অপরাধটা কোথায়? যদি ‘বঙ্গবন্ধু’ নামে টুর্ণামেন্ট আয়োজন করতে আমাকে ক্রীড়া পরিষদের ভবনে জিমনেসিয়ামটি বরাদ্দ দেয়া না হয় তাহলে আমি বিষয়টি ক্রীড়া মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর উপস্থাপন করতে বাধ্য হব।’

এ পরিস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান সিকদারের সঙ্গে আবারো যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি জানি না টুর্ণামেন্ট অদৌও হবে কি-না? আমাদের বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়নদো এসোসিয়েশেনটি বন্ধ করতে একটি মাফিয়া চক্র ক্রীড়া পরিষদের কিছু মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মিশনে নেমেছে।’ আমি জীবিত থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে অরিজিনাল তায়কোয়নদোকে এগিয়ে নিয়ে যাবো ইনশাল্লাহ। শারীরিক ও মানসিকভাবে একটি শক্তিশালী বাঙালি জাতি তৈরি করাই হচ্ছে আমার মূল লক্ষ্য। আশা করি অরিজিনাল তায়কোয়নদো ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারীরা, ষড়যন্ত্র ছেড়ে বাংলাদেশে অরিজিনাল তায়কোয়নদোর উন্নয়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে এটাই আমি তাদের কাছ থেকে কামনা করছি। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশে অরিজিনাল তায়কোয়নদো এর অগ্রযাত্রা উন্নয়ন অর্থাৎ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়নদো এসোসিয়েশনের কোন কার্যক্রমকেই দাবিয়ে রাখতে পারবে না ষড়যন্ত্রকারীরা।