গাজীপুরে ইয়াবা উদ্ধার মামলার তদন্ত করতে গিয়ে খোঁজ মিলেছে দুই বছর পূর্বে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তির লাশ। মাদক ব্যবসার বিরোধকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যার পর মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল। সোমবার বিকেলে পুলিশ ঘরের মেঝে খুঁড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট গভীর থেকে নিহতের কঙ্কাল উদ্ধার করে। খুন হওয়া ওই ব্যক্তির নাম মোঃ মিনারুল (৪১)। তিনি জামালপুরের বকশিগঞ্জ থানার মধ্য পলাশতলা এলাকার নুরুবক্তার ছেলে।

জিএমপি’র উপ পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-উত্তর) আবু তোরাব মোঃ শামছুর রহমান জানান, গত ২২ অক্টোবর ২৭০০ পিস ইয়াবা টেবলেটসহ ৯ টি মামলার আসামি মোঃ আলমসহ চারজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেন জিএমপি’র বাসন থানা পুলিশ।এ ঘটনায় এসআই দীপঙ্কর রায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃত আলমকে দুইদিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদকালে তার দেয়া তথ্যানুযায়ী সোমবার বিকেলে পুলিশ গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন নান্দুন কড্ডা এলাকার মোল্লাপাড়ার জনৈক হালিমের বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় একটি টিনসেড ঘরের মেঝে খুঁড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট গভীর থেকে নিহত মিনারুলের হাড়গোড় উদ্ধার করে। মিনারুল কোনাবাড়ি থানাধীন আমবাগ এলাকায় স্বপরিবারে ভাড়া বাসায় থাকতো। গত ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর দুপুরে সে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের ঘটনায় তার স্ত্রী মৌসুমী বেগম গত ২০২১ সালের ৯ জানুয়ারি কোনাবাড়ি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। নিখোঁজ স্বামীর সন্ধান পেতে তিনি র‌্যাবের নিকট অভিযোগও করেন।

তিনি আরো জানান, ২০২০ সালের শেষের দিকে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন নান্দুন কড্ডা এলাকার মোল্লাপাড়ার জনৈক হালিমের বাড়িতে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ভাড়া থাকতো আলম। আলম ও মিনারুল দু’জনেই মাদক ব্যবসায়ী। মিনারুলের সঙ্গে মাদকের টাকার ভাগাভাগি ও পূর্বের একটা হত্যা মামলা নিয়ে আলমের বিরোধ সৃষ্টি হয়। মিনারুলের বড়ভাই মিজান ওই হত্যা মামলার বাদী। তাদের মধ্যে বিরোধের জেরে গত ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর আলম তার বাসায় ডেকে আনে মিনারুলকে। রাত আটটার দিকে মাদকের টাকার ভাগাভাগি ও ওই হত্যা মামলা তুলে নিতে চাপ দিলে আলম ও মিনারুলের কাথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে আলমসহ ৪/৫ জন লোহার রড দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে মিনারুলকে হত্যা করে। পরে নিহতের লাশ বাসার পাশে মাটি চাপা দিয়ে পুঁতে রাখে। পরবর্তীতে ওইস্থানে বাড়ির মালিক একটি টিনসেড ঘর তৈরী করেন। নিহত বিভিন্ন থানায় ৬/৭টি মামলা রয়েছে বলে গ্রেফতারকৃত আলম জিজ্ঞাসাবাদ কালে জানিয়েছে।

বাসন থানার ওসি মালেক খসরু খান জানান, গ্রেফতারকৃত আলম মিয়া (২৫) কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারি থানার চর ভুরুঙ্গামারি (দিঘিপাড়া মাঝিবাড়ি) এলাকার মৃত রজব আলীর ছেলে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন থানায় মাদক মামলাসহ ৯টি মামলা রয়েছে। মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে লেনদেন এবং পূর্ব শত্রুতার জেরে গ্রেফতারকৃত আলম তার সহযোগীদের নিয়ে মিনারুলকে হত্যার পর নগরীর নান্দুন কড্ডা এলাকায় একটি বাড়ির পাশে মাটিতে পুঁতে রাখে। মাদক মামলায় গ্রেফতারকৃত আলমকে দুইদিনের রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার দেওয়া তথ্য ও দেখানো মতে ওই স্থান থেকে হত্যার প্রায় দুই বছর পর মিনারুলের লাশের কঙ্কাল সোমবার বিকেলে উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে আলমের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হবে এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিহতের উদ্ধার হওয়া মাথার খুলি ও হাড়গোড়সমূহ ময়না তদন্ত এবং ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।

কঙ্কাল উদ্ধার অভিযানকালে জিএমপি’র উপ পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-উত্তর) আবু তোরাব মোঃ শামছুর রহমান, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রেজওয়ান আহমেদ, সহকারি কমিশনার (ডিবি) চৌধুরী মোঃ তানভীর, বাসন থানার ওসি মালেক খসরু খান ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।