ক্ষমা চেয়ে দলে ফেরার চার মাসের ব্যবধানে আবারও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হলেন গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করার দায়ে জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সংগঠনের গঠনতন্ত্রের বিধি মোতাবেক গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।’

এর আগে, রবিবার (১৪ মে) আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় সভাপতি মন্ডলীর সভায় জাহাঙ্গীর আলমকে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়।

বৈঠক সূত্র জানা গেছে, সভায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনসহ আসন্ন পাঁচ সিটি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতা হলেও দলের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করায় জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে আলোচনা ওঠে। পরে সম্পাদকমন্ডলীর নেতারা বলেন, জাহাঙ্গীর আলমকে এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে কটুক্তি করায় দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে ক্ষমা চাওয়ায় তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু এখন তিনি আবার দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। একই সঙ্গে তার মাকেও তিনি প্রার্থী করেন। নিজের মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পরে মায়ের পক্ষে প্রচারণা করছেন জাহাঙ্গীর। দলের বিপক্ষে কথা বলছেন তিনি। এসব কারণে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে চিরতরে বহিষ্কারের সুপারিশ করেন তারা। এছাড়াও জাহাঙ্গীর আলম যেন দলের কোনো কর্মকান্ডে যুক্ত হতে না পারেন সে বিষয়েও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের নিয়ে গাজীপুরের তৎকালীন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিতর্কিত মন্তব্যের একটি রেকর্ড ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপ্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠণের নেতা কর্মীরা বিক্ষোভে নামে। ওই বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগে একই বছরের ১৯ নবেম্বর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে তার প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়। এরপর বেশকিছু অভিযোগের প্রেক্ষিতে একই বছরের ২৫ নবেম্বর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। দল থেকে বহিষ্কারের পর ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে চলতি বছরের (২০২৩ সালের) জানুয়ারিতে জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপ্রেক্ষিতে প্রায় সাড়ে ১৩ মাস পর গত জানুয়ারিতে দলে ফিরেন তিনি।

এদিকে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন তফসীল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। দলে ফেরার চারমাসের মধ্যে এ নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জাহাঙ্গীর আলমসহ গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৭ নেতা আবেদন করেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এড. আজমত উল্লা খান। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলম দলের ওই সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। একই সঙ্গে তার মাকেও তিনি প্রার্থী করেন। পরে বাছাইয়ে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। এরপর দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা না চালিয়ে তার মা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ি প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন জাহাঙ্গীর আলম। শুধু তা-ই নয় দলের বিপক্ষেও কথা বলছেন তিনি। এতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন জাহাঙ্গীর। এরপ্রেক্ষিতে আবারও আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার হন জাহাঙ্গীর আলম।