গাজীপুরে দাম্পত্য ও পারিবারিক বিরোধের প্রতিশোধ নিতে টিকটকার এক বিউটিশিয়ানকে হাত-পা বেঁধে খুন করার মূল পরিকল্পনাকারী তার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১’র সদস্যরা। বুধবার র‌্যাব-১’র স্পেলাইজড কোম্পানী পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মেজর এএসএম মাঈদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত নিহতের খালাতো ভাই রাকিবুল ইসলাম (২২) ও স্বামীর সম্পর্কীয় ফুপাতো বোন সোমা রাণী ঘোষ (৩২) বুধবার আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

নিহতের গ্রেফতারকৃত স্বামীর নাম- মিঠুন চন্দ্র ঘোষ ওরফে মৃদুল হাসান (২৭)। সে গাজীপুর সদর উজেলার জয়দেবপুর থানাধীন খুদে বর্মী এলাকার নিতাই চন্দ্র ঘোষের ছেলে।

র‌্যাব-১’র ওই কর্মকর্তা জানান, গত রবিবার (৪ জুন) রাতে মহানগরীর সদর থানাধীন আদাবৈ এলাকার ‘রাজকন্যা বিউটি পার্লার’ এর একটি কক্ষ থেকে ওই পার্লারের মালিক রুবিনা আক্তারের (২৪) হাত-পা ও মুখ বাঁধা এবং কাঁথা দিয়ে মুখ পেঁচানো অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এঘটনায় নিহতের মা আছিয়া বেগম বাদী হয়ে পরদিন সোমবার থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে পাবনা জেলার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী নিহতের স্বামী মিঠুন চন্দ্র ঘোষ ওরফে মৃদুল হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত মৃদুল হাসান ভিকটিম রুবিনা আক্তারকে হত্যার কথা স্বীকার করে চাঞ্চল্যকর হত্যার লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেয়।

এদিকে জিএমপি’র সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম জানান, পুলিশ রুবিনা আক্তার হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত নিহতের খালাতো ভাই রাকিবুল ইসলাম (২২) ও স্বামীর সম্পর্কীয় ফুপাতো বোন সোমা রাণী ঘোষকে (৩২) সোমবার গ্রেফতার করে। আদালতের মাধ্যমে দুইদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বুধবার তাদেরকে আদালতে হাজির করা হলে তারা হত্যাকান্ডে নিজেদেরকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

গ্রেফতারকৃতরা জানায়, প্রায় ১৪ মাস আগে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের যুবক মিঠুন চন্দ্র ঘোষকে ভালবেসে বিয়ে করেন বিউটিশিয়ান রুবিনা আক্তার (২৪)। বিয়ের সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে মিঠুন চন্দ্র ঘোষ নিজের নাম রাখেন মৃদুল হাসান। এটি রুবিনার তৃতীয় বিয়ে। এ বিয়ের দেনমোহরানা ২০লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। রুবিনা গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন আদাবৈ এলাকার আব্দুস ছালাম তালুকদারের মেয়ে। বিউটি পার্লারের ব্যবসার পাশাপাশি রুবিনা টিকটক করতো। সম্প্রতি সে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি মৃদুল জেনে গেলে তাদের মধ্যে দাম্পত্য বিরোধের সৃষ্টি হয় এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এরজেরে রুবিনা সম্প্রতি মৃদুলকে বটিদা’ দিয়ে আঘাত করে ও মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। স্বামী অন্যত্র চলে যাওয়ার পর রুবিনা নিজের মালিকানাধীন ওই পার্লারের পেছনের একটি কক্ষে একা থাকতো। রুবিনা তার স্বামীর কাছে ভরন পোষণ ও দেনমোহরের টাকা দাবী করে চাপ সৃষ্টি করে। সে এব্যাপারে থানায়ও অভিযোগ করে। এতে ক্ষুব্ধ হয় মৃদুল।

এসব কিছু থেকে পরিত্রাণ পেতে ও প্রতিশোধ নিতে মৃদুল বিষয়টি রুবিনার খালাতো ভাই রাকিবুলকে জানায় এবং রুবিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। রুবিনাকে হত্যার জন্য নিজেদের সঙ্গে সোমা রাণী ঘোষকে ভাড়াটিয়া খুনী হিসেবে ঠিক করে মৃদুল। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী মৃদুল ও সোমাকে দু’টি বোরকা সরবরাহ করে রাকিবুল। ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ওই বোরকা পড়ে সোমা ও রুবিনার স্বামী মৃদুল একটি অটো রিক্সায় চড়ে রুবিনার রাজকন্যা বিউটি পার্লারে যায়। তারা পার্লারের কক্ষে ঢুকে রুবিনাকে মেঝেতে শোয়ায়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে। পরে একটি তোয়ালে দিয়ে শ্বাসরোধে রুবিনাকে হত্যা করে তারা। হত্যাকান্ডের সময় ধ্বস্তাধ্বস্তিতে মাথায় ও গলায় আঘাত পায়। এসময় বাইরে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দেয় রাকিবুল। হত্যার পর নিহতের মোবাইল ও কানের দুল নিয়ে সেখান থেকে মৃদুল ও সোমাকে একটি মোটরসাইকেলে উঠিয়ে আমতলী এলাকায় পৌছে দেয় রাকিবুল। এরপর তারা পালিয়ে যায়।

গ্রেফতারকৃত সোমা রাণী ঘোষ (৩০) গাজীপুর সদর উজেলার জয়দেবপুর থানাধীন খুদে বর্মী এলাকার মৃত কলিন্দ্র চন্দ্র ঘোষের মেয়ে এবং রাকিবুল ইসলাম (২২) মহানগরীর সদর থানাধীন আদাবৈ এলাকার আবুল কালাম আজাদের ছেলে ও নিহতের খালাতো ভাই।