গাজীপুরে ছিনতাইকালে পকেটে টাকা না পেয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় ও খুন করেছে ছিনতাইকারীরা। রেললাইনের পাশ থেকে ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে টঙ্গী রেলওয়ে পুলিশ। ক্লুলেস এ ঘটনার ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে প্রায় তিন সপ্তাহে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। সোমবার জিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার ফুলদি মাঝুখান এলাকার লোকমান সরকারের ছেলে পলাশ সরকার (২৬) এবং মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি থানার চিতারা দিঘীরপাড় এলাকার মৃত আলী আকবরের ছেলে আল আমিন (২১)।
নিহতের খালাতো ভাই ইব্রাহীম ও স্বজনেরা জানান, গত ঈদের আগে ২৬ জুন রাতে গাজীপুরের মীরের বাজার এলাকার খালার বাসা থেকে ইজিবাইকযোগে সাইনবোর্ড এলাকার মামার বাড়ি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন উত্তরার একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তামিম হোসেন (২৫)। তাকে টঙ্গী রেলস্টেশনের আউটার সিগনালের পাশে তিস্তার গেইট এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইনের পাশ থেকে উদ্ধার করে প্রথমে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় রেলওয়ে পুলিশ। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। কুমিল্লার হোমনা থানার শ্রীমুদ্দি গ্রামের ছানাউল্লাহর ছেলে তামিম তার খালার বাসায় থেকে লেখাপড়া করতেন।
টঙ্গী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ছোটন শর্মা জানান, টঙ্গীর তিস্তার গেইট এলাকার রেলইনের পাশ থেকে রাত ১০টার দিকে তাকে মুমুর্ষাবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার নাম পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায় নি। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় ঈদের ভীড়ে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে তিনি আহত হন। অন্য কোন ক্লু না পাওয়ায় এব্যাপারে রেলওয়ের কমলাপুর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।
জিএমপি’র ওই কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান জানান, ক্লুলেস এ ঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ছায়া তদন্ত শুরু করে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তদন্তের এক পর্যায়ে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই ছিনতাইকারী পলাশ সরকার ও আল আমিনকে টঙ্গীর গোপালপুর বস্তি এলাকা হতে রবিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রেঞ্জ (সিলাই রেঞ্জ) এবং মুক্তিপণের ৪হাজার টাকা জব্দ করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে রবিবার টঙ্গী পূর্ব থানায় এক মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তারকৃতরা সোমবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
তিনি আরো জানান, ঘটনার রাতে ইজিবাইকটি টঙ্গী আমতলী এলাকায় পৌছলে ৫/৬ জন ছিনতাইকারী অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ও মারধর করে আরোহী তামিম ও অপর যাত্রী সোহেল রানার কাছ থেকে দু’টি মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এসময় তাদের কাছে পর্যাপ্ত টাকা না পেয়ে ছিনতাইকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দুইজনকে অপহরণ করে স্থানীয় শিলমন স্পেশালাইজড হাসপাতালের পেছনের অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায়। সেখানে ছিনতাইকারীরা তাদের বেধড়ক মারধর করে এবং পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবী করে। ছিনতাইকারীরা তামিমের পরিবারের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ১০হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। বেধড়ক মারধরের কারণে তামিম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তার মৃত্যু হয়েছে ভেবে তামিমকে রেললাইনের পাশে ফেলে রেখে ছিনতাইকারীরা ইজিবাইকযোগে পালিয়ে যায়। যাওয়ার পথে তারা স্থানীয় একটি বিকাশের দোকান থেকে ওই টাকা উত্তোলন করে বলে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে।
