বিশ্বকাপ যাত্রার আগে আরও একবার ফুটে উঠলো বাংলাদেশের ব্যাটিং দৈন্যতা। আপন আঙিনায় টানা দুই ম্যাচ তারা দুইশ রানও করতে পারল না। নিউ জিল্যান্ডের কাছে সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচেও বড় ব্যবধানে হেরেছে টাইগাররা।

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ৩৪.৩ ওভারে স্রেফ ১৭১ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ৯১ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় সফরকারী দল।

নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও সহ-অধিনায়ক লিটন দাসের অনুপস্থিতিতে এই ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন নামজুল হোসেন শান্ত।

সিরিজের প্রথম ম্যাচ ভেসে যায় বৃষ্টিতে। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ হারে ৮৬ রানে। ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশের মাটিতে এই প্রথম সিরিজ জিতল কিউইরা। ২০১০ সালে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে এবং ২০১৩ সালে তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয় ব্ল্যাক ক্যাপ বাহিনী।

বিশ্বকাপ অভিযানে ভারতে উড়াল দেওয়ার আগে দারুণ আত্মবিশ্বাস পুঁজি করল নিউ জিল্যান্ড। বোলিং-ব্যাটিং দুই বিভাগেই দলটির প্রস্তুতি হলো একেবারে আদর্শ।

বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা হলো ঠিক তার বিপরীত। বিশ্বকাপের আগে অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলানোর সিরিজ ছিল এটি। দলের এমন পারফরম্যান্স নিশ্চয় নতুন করে ভাবাবে টিম ম্যানেজমেন্টকে। যদিও এই সিরিজে পুরো শক্তির বাংলাদেশ দল খেলেনি। বিশ্রামে ছিলেন সাকিব, মিরাজ, তাসকিনরা। অবশ্য সেই অজুহাত দেওয়ার সুযোগ নেই। নিউ জিল্যান্ডও যে খেলেছে দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে।

ব্যাট হাতে এদিন একাই লড়েছেন শান্ত। করেছেন সর্বোচ্চ ৭৬ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ রান মাহমুদউল্লাহর।

এই ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের ১৬তম ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয় শান্তর। বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকে চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে ফিফটি করলেন এই টপ অর্ডার। তবে একটি জায়গায় ছাড়িয়ে গেছেন সবাইকে। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের ইসিংস এখন তার।

বাংলাদেশের ইনিংসে ফিফটি জুটি কেবল একটি। ৩৫ রানে তৃতীয় উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে ৫৯ বলে ৫৩ রান যোগ করেন শান্ত। পানি পানের বিরতি থেকে ফিরেই নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক ফর্গুসন জুটি আলাদা করেন। ফর্গুসনের লাফিয়ে ওঠা বল ব্যাটে লেগে স্টাম্পের উপর পড়ে। চেষ্টা করেও বল আটকাতে পারেননি মুশফিক। আউট হন ২৫ বলে ২ ছক্কায় ১৮ রান করে।

এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৯ রানের জুটিতে মাহমুদউল্লাহকে পেয়েছিলেন শান্ত। বোলিংয়ে ফিরে তাকে কট বিহাইন্ড করে জুটি ভাঙেন মিলনে।

দলকে একাই টানছিলেন শান্ত। তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি মেহেদি হাসানও। বোল্টের বলে কট বিহাইন্ড হন মেহেদী। সপ্তম ব্যাটার হিসেবে আউট হন ওয়ানডাউনে নামা শান্ত। ম্যাকনকির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে হন অধিনায়ক। এর আগে ৮৪ বলে ১০ চারে করেন ৭৬ রান।

বাংলাদেশ শেষ ৪ উইকেট হারায় ৩ রানে।

ম্যাচ শুরুর নির্ধারিত সময়ের ঠিক দুই-এক মিনিট আগে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হলে ঢেকে দেওয়া হয় পিচ। ২০ মিনিট পর শুরু হয় খেলা। নতুন বলে প্রথম আঘাত হানেন মিলনে। অভিষিক্ত জাকির হোসেনকে দ্বিতীয় ওভারেই ইনসাইড এজ বোল্ড করে দেন সিরিজে প্রথম সুযোগ পাওয়া এই পেসার।

পরের ওভারের প্রথম বলে তানজিদ হাসানকে স্লিপে ক্যাচ বানান বোল্ট। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশে বোল্টের প্রথম উইকেট এটি। শুরুর এই ধাক্কা সামলে উঠার আগেই আবারও মিলনের আঘাত। ডাউন দা উইকেটে খেলতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন তাওহিদ হৃদয়।

রান তাড়ায় শরিফুলকে টানা চারটি বাইন্ডারি হাঁকিয়ে শুরু করেন ফিল অ্যালেন। দশম ওভারে তাকে ফিরিয়েই ৪৯ রানের জুটি ভাঙেন চোট কাটিয়ে ফেরা শরিফুল। পরের বলেই অভিষিক্ত ডেন ফক্সক্রফটকে ক্লিন বোল্ড করে দেন বাঁহাতি এই পেসার।

নাসুম যতক্ষণে তৃতীয় উইকেটে ৮১ রানের জুটি ভাঙেন, সফরকারীরা ততক্ষণে জয়ের খুব কাছে। ৮০ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ৭০ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন ওপেনার উইল ইয়াং। হেনরি নিকোলস অপরাজিত থাকেন ৮৬ বলে ৫০ রানে। ১৬ বলে অপরাজিত ২৩ রান করেন টম ব্লান্ডেল।

চোট কাটিয়ে ফেরার ম্যাচে ৬ ওভারে একটি মেডেনসহ ৩২ রানে ২ উইকেট নেন শরিফুল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৩৪.৩ ওভারে ১৭১ (তানজিদ ৫, জাকির ১, শান্ত ৭৬, হৃদয় ১৮, মুশফিক ১৮, মাহমুদউল্লাহ ২১, মেহেদি ১৩, নাসুম ৭, হাসান ১, শরিফুল ১, খালেদ ০*; অতিরিক্ত ১০; বোল্ট ৬-০-৩৩-২, মিলনে ৬.৩-০-৩৪-৪, সোদি ৬-০-৪০-০, ফার্গুসন ৬-০-২৬-১, রবিন্দ্র ৫-১-২০-১, ম্যাকনকি ৫-০-১৮-২)।

নিউ জিল্যান্ড: ৩৪.৫ ওভারে ১৭৫/৩ (অ্যালেন ২৮, ইয়াং ৭০, ফক্সক্রফট ০, নিকোলস ৫০*, ব্লান্ডেল ২৩*; অতিরিক্ত ৪; শরিফুল ৬-১-৩২-২, হাসান ৬-১-২৯-০, নাসুম ১০-০-৫০-১, মেহেদি ৫-০-২৫-০, খালেদ ৪-০-১২-০, মাহমুদউল্লাহ ৩.৫-০-২৫-০)।

ফল: নিউ জিল্যান্ড ৭ রানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: উইল ইয়াং।

ম্যান অব দা সিরিজ: হেনরি নিকোলস।