পোশাক শিল্পে শ্রমিকের মজুরি বাড়ানোকে কেন্দ্র করে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে গাজীপুরের ১২৩টি কারখানায় ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা। ওই ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ২২টি মামলায় এ পর্যন্ত ৮৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শীঘ্রই বন্ধ কারখানা খুলে উৎপাদনে যাবে সব শিল্প কারখানা।

শনিবার (১১ নবেম্বর) দুপুরে শিল্প পুলিশের উপ-মহা পরিদর্শক (ডিআইজি) জাকির হোসেন খান শ্রমিক আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্থ কোনাবাড়ি এলাকার পোশাক কারখানা তুসুকা গার্মেন্টস্ পরিদর্শনে এসে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ডিআইজি জাকির হোসেন খান বলেন, গাজীপুরের কোনাবাড়ী, কাশিমপুর ও ভোগড়া এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ হলেও কোনাবাড়িতে শ্রমিকদের আন্দোলন হয়েছে বেশি। আশুলিয়াতে কিছুটা আছে এবং চট্টগ্রাম এলাকায় আন্দোলন নেই। আমাদের ধারণা, কোনাবাড়িতে একটা গ্রুপ আন্দোলন করার জন্য শ্রমিকদের উস্কানি ও মদদ দিচ্ছে। যারা উস্কানি দিচ্ছে তাদেরকে বা ওইসব গ্রুপকে চিহ্নিত করার কাজ করছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও ইন্টিলিজেন্স সেল।

তিনি বলেন, শিল্প পুলিশ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাব, জেলা পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছেন। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ঘোষণা করেছেন। এখানে যারা উস্কানি দিচ্ছেন আমরা তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, সাধারণ শ্রমিকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যারা শিল্প কারখানা এ ধ্বংসাত্মক কাজের সঙ্গে জড়িত, যেসব শ্রমিক ওইসব শ্রমিকদের সঙ্গে বহিরাগত লোক নিয়ে আন্দোলনে মদদ দিচ্ছে তাদেরকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে। এর পেছনে যেসব বহিরাগত জড়িত রয়েছে তাদেরকেও গ্রেপ্তার করা হবে।

তিনি এসময় বলেন, গাজীপুর কোনাবাড়ি মিলে ১৭টি কারখানা বন্ধ আছে। মালিক কর্তৃপক্ষ যাতে কারখানা চালু রাখেন আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি। তারা দ্রুত উৎপাদনে যাবে।

এসময় গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার (এসপি) সারোয়ার আলমসহ শিল্প পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। তারা বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শণ করেন।

প্রসঙ্গতঃ ন্যূনতম মজুরী ২৩ হাজার টাকা করার দাবীতে গত ২৩ অক্টোবর থেকে আন্দোলন শুরু করে গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকেরা। গত ৭ নবেম্বর মজুরি বোর্ড পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে ঘোষণা দেয়। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তে শ্রমিকরা সন্তুষ্ট না হওয়ায় ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখান করে পরদিন বুধবার (৮নবেম্বর) থেকে ফের আন্দোলনে নামে শ্রমিকেরা। তারা বিভিন্ন এলাকায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও সড়ক অবরোধ করে তান্ডব চালায়। এসময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সর্টগানের গুলি, টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। সংঘর্ষকালে ৩জন নিহত হয়। এসময় পুলিশ সহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ অবস্থার মধ্যে জানমালের নিরাপত্তা ও নাশকতা এড়াতে বেশ কিছু কারখানা তাৎক্ষণিক ছুটিও ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।