সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেছেন, ২০০৫ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ ডলার, ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৮৪৫ডলার, তা বেড়ে বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২হাজার ৭৬৩ ডলার। দেশ যে এগিয়ে গিয়েছে সে-টা কিন্তু পরিকল্পনা মাফিক, এলোপাথারিভাবে নয়। এর পেছনে আরেকটা বড় কারণ ছিল পরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং রাজনীতির নেতৃত্বে স্থিতিশীলতা। এ দু’টি কারণেই আমাদের প্রবৃদ্ধি এসেছে। আমরা এখন উন্নয়নের স্বর্ণ যুগ অতিক্রম করছি।

মঙ্গলবার জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত ‘আন্তঃকলেজ ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২৩’ এর চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ও মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গাজীপুরে বিশ^বিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের ডরমিটরি ভবনে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে সভাপিত্ব করেন । বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। এতে মূখ্য আলোচক ছিলেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার ও সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ।

অনুষ্ঠানে ৩২টি ইভেন্টে সারাদেশের জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ১৩৩৯টি কলেজের ২৪ হাজার ৯৩৮জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ৭২টি কলেজের ৪১৩ জন শিক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হিসেবে পুরস্কার গ্রহণ করে। মোট ৭৫টি ভেন্যুতে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। দৌড়, লং জাম্প, হাই জাম্প, শটপুট নিক্ষেপ, চাকতি নিক্ষেপ, ফুটবল, ক্রিকেট, দাবা, ভলিবল, বাস্কেটবল, সাঁতার ফ্রি স্টাইল, সাঁতার ব্রেস্টস্টোক, কাবাডি, হ্যান্ডবল, হকি, ব্যাডমিন্টন একক, ব্যাডমিন্টন দ্বৈত, টেবিল টেনিস একক, টেবিল টেনিস দ্বৈত, ক্যারম একক, ক্যারম দ্বৈত, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, একক অভিনয়, একক নৃত্য, দেশাত¦বোধক গান, নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, লোকগীতি, সৃজনশীল দলীয় নৃত্য, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ ৩২টি ইভেন্টে শিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাবশালী তিনটি দেশ হলো ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। আমরা যখন স্বাধীন হই তখন পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় আমাদের চেয়ে ৭০শতাংশ বেশি ছিল। আজকে আমাদের অর্ধেক মাথপিছু আয় হলো পাকিস্তানের। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আমরা প্রথমে মাথাপিছু আয়ে ভারতকে পেছনে ফেলি। তখন ভারতের মাথাপছিু আয় ছিল ১৮৭৭ডলার আর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮৮৮ডলার। সেই থেকে চার বছর মাথাপিছু আয়ে আমরা এগিয়ে আছি। আর ৮বছর আগে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে আমরা এগিয়ে গেছি। এখন পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় আমাদের চেয়ে অর্ধেক। তাদের আয় এখন ১৪৭৩ ডলার আর আমাদের মাথাপিছু আয় হলো ২৭৬৩ ডলার। ২০১৬ সালে পাকিস্তানের মাথাপছিু আয় ছিল ১৪৬৮ ডলার, ২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় বেড়েছে মাত্র ৫ ডলার। শুধু অর্থনীতিতে নয় সামাজিক ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশিত আয়ু এখন সবচে বেশি দক্ষিণ এশিয়ায়। প্রত্যাশিত আয়ুর দিক থেকে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতকে পেছনে ফেলেছে। আমাদের দেশে প্রত্যাশিত গড় আয়ু হলো ৭৪.৪, ভারতের হলো ৭৩ এবং পাকিস্তানের প্রত্যাশিত গড় আয়ু হলো ৬৭। এ তথ্য থেকে বুঝা যাচ্ছে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রেও আমরা এগিয়েছি। বাংলাদেশে শিক্ষার হার ৭৫শতাংশ, ভারতের ৭৪ শতাংশ এবং পাকিস্তানের ৬৭শতাং। শিক্ষাক্ষেত্রেও তাদেরকে আমা পেছনে ফেলেছি। নারী ক্ষমতায়নেও আমরা এগিয়েছি। দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নে দক্ষিণ বাংলাদেশ এগিয়ে। ২৮ বছর শুধু নারী নেতৃত্বে আমাদের সরকার প্রধান। এটা বোধহয় বিশে^ প্রথম যে নারী নেতৃত্বে এত দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকে। শুধু তাই নয়। ঘরে- বাইরে নারীরা যারা কাজ করে আয় করে তাদের সংখ্যার হার বাংলাদেশে হলো ৪৩শতাংশ। পাকিস্তানে কর্মক্ষেত্রে যে সংখ্যায় নারী আছে বাংলাদেশে আছে তার দ্বিগুনেরও বেশি। এক লক্ষ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে পাকিস্তানে ২৬৭টি সন্তান মারা যায় আমাদের দেশে তার সংখ্যা হলো ১৬৩, আর ভারতে ২১২। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আমাদের দেশ পরিকল্পিতভাবে এগুচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ আয়ের দেশ হবে, সোনার বাংলাদেশ হবে। তখন বাংলাদেশে দারিদ্রতা থাকবে না, অশিক্ষা থাকবে না, বেকারত্ব থাকবে না। বহুদলীয় ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সামাজিক অবস্থা গড়ে উঠবে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরি হবে।

মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু চেয়ার ড. হারুন-অর-রশিদ রাজনীতির নামে মানুষ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘১৫ আগস্টের পর দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আজ বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশে^ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আজকে আবার দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। মানুষ পুড়িয়ে মারছে। আন্দোলনের নামে যারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে তারা দেশ ও জাতির শত্রু। তাদের মধ্যে যদি মনুষ্যত্ব থাকত, সামান্য দেশপ্রেম থাকত তাহলে এই ঘৃণ্য কাজ করতে পারত না।

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘যে বাংলাদেশে তুমি বাস করছে, যে ডিসেম্বরে আমরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি সেটি আমাদের বিজয়ের মাস। ৩০ লক্ষ শহিদের আত্মাহুতি, ২ লক্ষ মা-বোনের নির্যাতন সয়ে সয়ে আমরা মানচিত্র পেয়েছি। এই দেশমাতৃকায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতিরাষ্ট্রের ¯্রষ্টাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন অগণতান্ত্রিক সামরিক শাসনের যাঁতাকলে ছিলাম। ১৯৯০ এর গণআন্দোলনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত দিয়ে পুনরুদ্ধার হয়েছে গণতান্ত্রিক যাত্রার। আর তাঁর হাত দিয়েই একে একে বিজয় করেছি সমুদ্রসীমা, ছিটমহল। পাহাড়ি বন্ধুদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করেছি। আমরা মঙ্গা দূর করেছি। আমরা আগামী দিনে বিশে^ নেতৃত্ব দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেই প্রস্তুতিতে শান্তি, সংস্কৃতি, ঐক্য, সংহতি, সৃজনশীলতা, কৃষ্টির চর্চা অপরিহার্য।

তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের ইতিহাস পড়ে। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানে। এই শিক্ষার্থীরা একইসঙ্গে সংস্কৃতি চর্চা করে। আর চর্চা করে দেশপ্রেম আর বিশ^ নাগরিক হবার। তোমরা যারা এই ক্যাম্পাসে এসেছ আজকে সারদিন তোমার এই ক্যাম্পাসে থাকবে, ঘুরবে। এটি তোমাদের ক্যাম্পাস। তোমাদের জন্য এই ক্যাম্পাসকে আমরা আরও সুন্দর এবং প্রাণবন্ত করে সাজাতে চাই।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ। ধন্যবাদ জানান ট্রেজারার প্রফেসর আবদুল সালাম হাওলাদার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন। উল্লেখ্য, ‘আন্তঃকলেজ ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২৩’ ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ থেকে শুরু হয়। উপজেলা, জেলা ও বিভাগ পেরিয়ে বিজয়ীরা চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়।