গাজীপুরে আনন্দঘন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রবিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার ৫টি আসনে সকালের দিকে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি তুলনা মূলক ছিল কম। এসময় বেশিরভাগ কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের অলস সময় পার করেন। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। নির্বাচনে জেলার সবকয়টি আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হয়।

গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা এএইচএম কামরুল হাসান জানান, রবিবার সকালে গাজীপুরের ৫টি আসনের ৯৩৫টি ভোট কেন্দ্রে একযোগে ভোট গ্রহন শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত শন্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। গাজীপুরে এবার মোট ভোটার সংখ্যা হলো ২৬ লাখ ১৪হাজার ৩২৭। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা হলো ১৩লাখ ১০হাজার ২৮৩জন এবং নারী ভোটার হলো ১৩লাখ ৪ হাজার ১৭জন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৮টায় ভোট গ্রহন শুরুর সময় ভোটার ও প্রার্থীদের এজেন্টদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। সকালে নারী ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও পুরুষ আর নতুন ভোটাদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশী। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। সকাল ৯টা পর্যন্ত গাজীপুর-১ আসনের বাড়ীয়ালী নলজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মহিলাদের একটি বুথে কোন নারী ভোটার ভোট দিতে আসেন নি।

একই আসনের পশ্চিম চান্দনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের (মহিলা) ৬ নং বুথে ভোট দিতে আসা ডঃ নুসরাত সুলতানা জানান, রবিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে আমি প্রথম কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছি। কিন্তু তখনও ভোট গ্রহণ শুরু হয়নি। এব্যাপারে ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জুয়েল ইসলাম জানান, রবিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকেও কোন প্রার্থীর এজেন্ট কেন্দ্রে না আসায় ব্যালট বাক্স সিল করা সম্ভব হয়নি। ফলে ভোট গ্রহন করতে পারছি না। কারণ নিয়ম রয়েছে তাদের সামনে খালি ব্যালট বক্স সিল করতে হবে।

বেলা ১১টা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রের কোন কোন বুথে ২০ থেকে ৩০ সর্বোচ্চ ১০০টির মতো ভোট প্রদান করেছেন ভোটাররা। কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বাইরে ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়। গাজীপুর-১ আসনের চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের পুরুষ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সোলাইমান মিয়া জানান, তার কেন্দ্রে ভোটার রয়েছে ৩০৮০ জন। কিন্তু বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভোট প্রয়োগ করেছেন ১১৩ জন ভোটার। একই স্থানের মহিলা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার এরশাদ আলী জানান, তার কেন্দ্রে ভোটার রয়েছে ২৮৯০ জন। এ পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৮৫ টি।

দুপুর পৌনে ২টার দিকে গাজীপুর-২ আসনের রমনী কুমার পৈত উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ২টি বুথের ২ জন পোলিং অফিসার অলস সময় কাটাচ্ছেন। সকাল থেকেই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম বলে আনসার সদস্যরা জানান। তবে সকাল বেলায় কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বেশি ছিলো দাবি করে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার তাজুল ইসলাম জানান, তার কেন্দ্রে বেলা ১টা পর্যন্ত কাস্টিং হয়েছে ৫১.৩৭ ভাগ ভোট। মোট ৪০৬৬ জন ভোটারের মধ্যে ১টা পর্যন্ত ২০৮৯ জন ভোটার ভোট প্রয়োগ করেছেন।

এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-১ আসনে ৭জন প্রার্থী, গাজীপুর-২ আসনে ৯জন, গাজীপুর-৩ আসনে ৭ জন, গাজীপুর-৪ আসনে ৭ জন এবং গাজীপুর-৫ আসনে ৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। রাতে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত গাজীপুরের মোট ৫টি আসনের মধ্যে ৪টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

শুধুমাত্র গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ডাকসু’র সাবেক ভিপি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখতারউজ্জামান এগিয়ে রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি কিছুটা পিছিয়ে আছেন। এগিয়ে থাকা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা হলেন- গাজীপুর-১ আসনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ আসনে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর-৩ আসনে রুমানা আলী টুসি ও গাজীপুর-৪ আসনে সিমিন হোসেন রিমি।

গাজীপুরে কেন্দ্র পরিদর্শণে ভারতীয় প্রতিনিধি দল

গাজীপুরের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। রবিবার (৭জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শহীদ স্মৃতি স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শন করেন তারা। এসময় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার, কক্ষের এজেন্ট ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর নির্বাচন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ওই কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে দুপুর ২টার দিকে টঙ্গী কলেজ গেইট এলাকায় কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

প্রতিনিধি দলের এক সদস্য বলেন, মানুষ ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছেন এবং ভোট দিচ্ছেন। ভোটের শতাংশ হিসেবে হয়তো এখনো আশানুরূপ হয়নি, কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। আমরা যে কয়টা কেন্দ্রে ঘুরেছি এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন অভিযোগ নেই। পরিদর্শণকালে প্রিজাইডিং অফিসার, এজেন্ট ও রাজনৈতিক দলে কোন প্রার্থী কোন ধরনের অভিযোগ করেননি। নির্বাচন কমিশন শান্তিপূর্ণ ভোটের যে কথা বলেছিলেন সে মোতাবেক ভোট হচ্ছে। শেষমুহূর্তে হয়তো ভোটের শতাংশের হার আরো বাড়বে ।