রাজশাহীর খাপড়া ওয়ার্ডের লড়াকু যোদ্ধা, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু, আজীবন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির আলোকিত এক নেতার প্রতিকৃতি কমরেড প্রসাদ রায়ের ২৮তম মৃত্যু বার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে।
আজ বুধবার ৭ ফেব্রুয়ারী তাঁর ২৮ তম মৃত্যু বার্ষিকী পালনে পাবনা মিডিয়া সেন্টার আয়োজন করেছিল এক স্মরণ সভার। পাবনার মিডিয়া সেন্টারের সহসভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক আঁখিনুর ইসলাম রেমনের সভাপতিত্বে ও মিডিয়া সেন্টারের সেক্রেটারী সাংবাদিক কামাল সিদ্দিকী’র সঞ্চালনায়
স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আব্দুল মজিদ। স্মরণ সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক‚ সামাজিক ও ক্রীড়া ব্যাক্তিত্ব মোঃ মুক্তার হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) পাবনা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সালফী আল ফাত্তাহ ‚ সিপিবি শহর শাখার সম্পাদক মোঃ শাহিনুর রহমান‚ বিশিষ্ট ডেইলী ষ্টারের ষ্টাফ রিপোর্টার আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দৈনিক ইছামতির প্রধান সম্পাদক মোস্তাফা সতেজ, ডেইলী নিউএজের মাহফুজ আলম, আমাদের সময়ের শুশান্ত কুমার সরকার, বিজয় টিভির প্রবীর সাহা প্রমুখ।
নিজের ভুমিকার কারণেই কমরেড প্রসাদ রায় জীবিতকালেই হয়ে উঠেছিলেন ‘দ্রোহের প্রতিশব্দ’। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুণঃরুদ্ধার করে অসাম্প্রদায়িক‚ বৈষম্যহীন পূর্ণ গণতান্ত্রিক সোনার বাংলা গঠনের মধ্যে দিয়ে কমরেড প্রসাদ রায়ের স্বপ্ন পূরণে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বক্তারা।
উল্লেখ্য, কমরেড প্রসাদ রায়ের জন্ম ১৯২৮ সালের ৫ আগস্ট পাবনা জেলার সুজানগর থানার তাঁতিবন্দের রায় পরিবারের প্রতাপ ভবনে । আজ এই দিনে কমিউনিস্ট পার্টির এই মহান নেতা ১৯৯৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন অসমাপ্ত রেখেই সবাইকে ছেড়ে অজানালোকে চলে যান। মানবিক সমতায় আস্থা রেখে, সাম্যবাদী দর্শনকে ভালোবেসে ১৯৪৮ সালের নিকষ কালো অন্ধকার যুগে জীবন বাজি রেখে কালের বরফ ভাঙার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন ঘর থেকে। আমৃত্যু দমন-পীড়ন আর আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেকে অবিচল রেখেছিলেন কমিউনিস্ট আদর্শে। আবার দীর্ঘ জেলজীবনের ফাঁকে ফাঁকে যুক্ত থেকেছেন পার্টি গড়ার কাজে, শ্রমিক আন্দোলনে। তাঁর জীবনের সর্বমোট ১৯ বছর ৫ মাস কেটেছেন জেল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। রাজশাহীর খাপড়া ওয়ার্ডে তিনিসহ ৩২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন এবং ৭ জন প্রাণ হারান। পরবর্তীতে আমৃত্যু শরীরে বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছিলেন সে গুলির স্মৃতি। কারণ কমরেড প্রসাদ রায় জানতেন জীবন মানেই যুদ্ধ, প্রতিনিয়ত সংগ্রামের অপর নাম। আদর্শের সঙ্গে জীবনাচরণকে মেলানোর আশ্চর্য্য শক্তি ছিল তাঁর। যাপন করতেন অতি সাধারণ জীবন। ধারণ করেছেন বহুমাত্রিক গুণাবলি। কমরেড প্রসাদ রায় ছিলেনএক জটিল সংগ্রামের নাম। যে আদর্শিক লড়াই সবাই করতে পারেন না; তিনি পেরেছিলেন বলেই শামিল হয়েছিলেন মেহনতি মানুষের যুদ্ধের আমৃত্যু বিপ্লবী।