দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে বাজার সিন্ডিকেটকে দায়ী করে মাহমুদুর রহমান মান্না অভিযোগ করে বলেছেন, ‘সরকারই সিন্ডিকেটদের পোষে’।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি এই অভিযোগ করেন।
মান্না বলেন, তথাকথিত নির্বাচন হয়েছে গত মাসের ৭ তারিখে… এক মাসেরও বেশি। জিনিসপত্রের দাম আগের চাইতে বেশি। একটা ভোট হলো জিনিসের দাম কমলো না। আগামী মাসের ১৭ তারিখ থেকে রোজা… জিনিসের দাম কমবে? সরকার বলেছেন, রোজার কারণে তারা চাল, তেল, চিনি, খেজুর… এগুলোর ওপরে শুল্ক প্রত্যাহার করেছেন। তারপরেও এসব জিনিসের একটাও দাম কমেনি।
আমাদের সরকার, শেখ হাসিনার সরকার নিজেকে খুবই শক্তিশালী মনে করে কিন্তু সিন্ডিকেটে হাত দিতে পারে না। এরা সিন্ডিকেটদের পোষে… মানুষ যেমন বাড়িতে পোষা প্রাণী রাখে, আমাদের সরকার এদেশের অনেকগুলো গুণ্ডা পালে, এদেশের বড় বড় ব্যবসায়ীদের পালে। ওদেরকে ডেকে ডেকে বলে, তোরা যা ইচ্ছা, যেমন ইচ্ছা কর… দেখবি আমাদের যেন বেশি বদনাম না হয়, তখন আমরা মাঝে মধ্যে তোদেরকে বকবো কিন্তু তোরা তোদের কাজ চালিয়ে যাবি… আমাদের দরকারের সময় যেন তোরা আমাদেরকে সহযোগিতা করিস।
নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে ‘প্রহসনের নির্বাচন মানি না: গণতন্ত্রের পক্ষে গণস্বাক্ষর অভিযান’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠান হয়। এতে টেবিলের ওপর কাপড় বিছিয়ে সেখানে গণতন্ত্রের পক্ষে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ স্বাক্ষর দিয়েছেন।
মান্না বলেন, তারা (সরকার) বড় বড় ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয়, সেই টাকা বিদেশে পাচার হয়। আমাদের এখানে একজন আছে, দরবেশ বাবা, আছে এস আলম, আছে সামিট গ্রুপ, আছে .. সরকার তাদের ঋণ দেয়। তাদের সরকার কিছুই করতে পারে না। ওরা জিনিসের দাম কমাতে পারে না, মানুষের পেটে ক্ষুধার আগুন… ওরা তাদের খাবার এনে দিতে পারে না।
‘আমরা বলি, নাগরিক ঐক্য অনেক বড় দল নয় কিন্তু নিজের মনের মধ্যে বিশ্বাস থেকে বলি, আমরা মনে করি জিনিসপত্রের দাম কমানো সম্ভব। আমরা যদি ক্ষমতায় যাই, আমাদের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ যদি ক্ষমতায় যায় প্রথম কথা হলো সিন্ডিকেট থাকবে না। বাজার যে মনিটর করে প্রতিদিন আপনারা জানেন টিসিবি হিসাব করে দেয় কোন জিনিসের দাম কত হবে… বাজারে বাজারে জিনিসপত্রের দাম লটকানো থাকে… আমাদের সময়ে যে টিসিবি থাকবে সেই টিসিবি সত্যি সত্যি চালের দাম কত হয় যাতে মানুষ খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে আবার ব্যবসায়ী মারা না যায় সে মুনাফা করতে পারে সেসব ঠিক করে বাজারে জিনিসপত্রের দরদামের তালিকা টানানো থাকবে।
মান্না বলেন, আমরা এই পর্যন্ত ঢাকা মহানগরে ৮টি স্বাক্ষর অভিযান করেছি। বাংলাদেশের অন্যান্য জেলাতেও আমাদের স্বাক্ষর অভিযান শুরু হয়েছে। আমরা বলেছি, এই স্বাক্ষর অভিযান চলতে থাকবে। আমরা দেখাব, দেখো লক্ষ লক্ষ মানুষ সই দিয়েছে…. আমরা সেই সই দেশের মানুষকে, বিশ্বের মানুষকে দেখাবো…তোমার ক্ষমতায় থাকবার অধিকার নাই।
এই যে এখানে (জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে) উনারা রিকশা চালকরা দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছেন…তারা বলেন, সই করবার সময় মানুষ বলেন, একটা কিছু করেন…। আমরা মনে করি, এক সময় আসবে এই সমস্ত নিরীহ গরীব মানুষ তারা একদিন পায়ে পায়ে পথে নামবে। সেটা বেশিদিন লাগবে না। সেই দিনের জন্যে এবং সেই জনতা অভ্যুত্থানের জন্যে আমরা আমাদের কাজ করছি। জনগণের আন্দোলন চলতে থাকবে।
অনুষ্ঠানে পাঁচ দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। এগুলো হচ্ছে, বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মালিবাগ হোসাফ টাওয়ারের সামনে, ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ীর মোড়ে, ১৬ ফেব্রুয়ারি শনির আখড়া ফুটওভার ব্রিজ সংলগ্ন, ১৮ ফেব্রুয়ারি ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। অনুষ্ঠানে দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।