জাতীয় পার্টির মধ্যে সরকারি দলের এজেন্ট ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে নিজের জন্মদিন উপলক্ষ্যে কেক কাটা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
জিএম কাদের বলেন, তারা আমাদের দল করে কিন্তু রাজনীতি করে অন্য দলের। আমাদের দল করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেয় কিন্তু রাজনীতি করার সময় তারা সরকারি দলের রাজনীতি করে। যখনই আমরা সঠিক রাজনীতি করতে চাই, তখনই আমাদের দলকে ভেঙে আরেকটি দল সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়।
তিনি বলেন, এটা সরকারই করে, যাতে আমরা স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে না পারি। আগে আমরা পরজীবী হলেও আমাদের একটা পছন্দ ছিল। আমরা যেকোনো পক্ষে যেতে পারি, একটা পয়েন্ট ছিল। এখন আমরা বন্দি হয়ে গেছি, একজনের কাছেই যেতে হবে।
জিএম কাদের বলেন, ১৯৯০ সালের পর জাতীয় পার্টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ক্ষমতার বাইরে থাকলে আমাদের দেশের দলগুলো টিকতে পারে না। ক্ষমতাসীনরা জুলুম-নির্যাতন করে আমাদের রাজনীতি করতে দেয়নি। যারা ক্ষমতাসীন দল করতে এসেছিল, তারা নব্বই সালের পর দল ছেড়ে চলে গেছে। তারা দল বা দেশের স্বার্থ দেখেনি।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে যখন আমরা মহাজোট করেছি, তখন অনেকেই বলেছে, আমরা পরজীবী হয়ে গেছি। তারা বলেছেন, আমরা নাকি অন্যের সহায়তা ছাড়া নির্বাচনে জয়ী হতে পারি না। দেশের বড় দুটি দলের নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে জয় পরাজয় নির্ধারণ হয়। সেই অল্প ভোট তো আমরা দিতে পারতাম। আমরা যদি পরজীবী হই, তারপরও আমাদের কাছে টানতে প্রতিযোগিতা ছিল।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, সেখানে আমাদের একটি বার্গেনিং পয়েন্ট ছিল, আমরা বার্গেনিং করে অনেক কিছু আদায় করতে পারতাম। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে আমরা বার্গেনিং করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। এখন আমাদের বলা হয় গৃহপালিত রাজনৈতিক দল।
জিএম কাদের বলেন, আমরা সঠিক রাজনীতি করতে গেলেই… একজন একটা ডাক দেবে, সরকার মদদ দেবে, মিডিয়া কাভারেজ দেবে আর আমাদের দল ভেঙে এবং আইনের মাধ্যমে আমাদের লাঙ্গল নিয়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
দল বাঁচাই না রাজনীতি বাঁচাই– এ সমস্যায় জাতীয় পার্টি ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারণ আমরা লোভ-লালসা থেকে দূরে থাকতে পারি না। আমাদের দলে থেকে যারা অন্য দলের রাজনীতি করে, তাদের আমরা দল থেকে বের করে দিতে পারি না। রাজনীতি বাঁচাতে আমাদের ঝুঁকি নিতে হবে। সরকার আমাদের দুর্বল করতে আমাদের মধ্যেই একটি জোট বানিয়ে রাখছে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আরও কিছু দিন পর আমার সঠিক মূল্যায়ন হবে। এখন যারা আমাকে মূল্যায়ন করছেন সেটা হয়ত সঠিক হচ্ছে না। সময়ের ব্যবধানে সব কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে। গেল নির্বাচনে আমি অনেক কিছুই শিখেছি। দেখেছি… রাজনীতি কত বেশি নোংরা হতে পারে, আবার কত বেশি মহৎ হতে পারে। দেখেছি ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য মানুষ কত বেশি নিচে নেমে যেতে পারে। দেখেছি দেশ ও জাতির জন্য মানুষ কত বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। এগুলো আমার চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবে। মহান আল্লাহ যেন এ শিক্ষাগুলো দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজে লাগাতে দেন।
জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া, নাজমা আখতার, মোস্তফা আল মাহমুদ প্রমুখ।