বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সামাজিক পরিস্থিতিতে একটা ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিই।
ঘটনাটার নাম, “নুরেমবার্গ ট্রায়াল” ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই ( ১৯৪৫ নভেম্বর ২০ থেকে, ১৯৪৬ অক্টোবর ১ পর্যন্ত ), যুদ্ধ অপরাধী দের লিস্ট তৈরী হয়েছিল এবং আন্তর্জাতিক কোর্টে, আন্তর্জাতিক আইন মেনে, তাদের বিচার হয়েছিল। সেই বিচারে, হিটলার, মুসোলিনি, তোজোর সঙ্গী সাথীদের কয়েক শো প্রমানিত যুদ্ধ অপরাধী দের মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন জেল হয়েছিল।
এই অপরাধীদের তালিকায় অনেকেই ছিল, যারা, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তা/কর্মচারি ছিল। যারা হিটলার এবং তার অক্ষ বাহিনীর হয়ে, বিরোধী দল ও মত দমনে প্রতিনিয়তই কাজ করত। তাদেরও মৃত্যু দন্ড হয়েছিল। ইতিহাস বলে তারা রেহাই পায়নি ।
ভয় দেখাচ্ছি না। লিস্টটা দেখে নিতে অনুরোধ করছি।
আর একটা তথ্য জানাই। নুরেমবার্গ ট্রায়াল-এ, অপরাধী দের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল ।
অপরাধীরা বলেছিল— তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ পালন করেছেন মাত্র। উত্তরে, বিচারপতি মহোদয় গণ বলেছিলেন—
আপনাদের কেউ একটা উদাহরণ দিন— হ্যাঁ, মাত্র একটা উদাহরণ দিন— যেখানে, আপনারা, অপরাধ করতে যাবার আগে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ছিলেন যে, কাজটা করা হয়তো অমানবিক হচ্ছে।
কিন্তু, অপরাধী দের কেউ একজনও, এই ধরনের একটা উদাহরণ দেখাতে পারে নি।
বিচারপতি মহোদয় গণ বলেছিলেন— ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ পালন করা যেমন কর্তব্য, তেমনই, কাজটা গর্হিত কিনা, সেটা সম্মন্ধে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ইনফরমেশন দেওয়াটাও কর্তব্য— আপনারা সেটা করেন নি।

আমাদের দেশেও খুনী, লুটেরা এবং জনগণের অধিকার হরণকারী ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ফ্যাসিবাদী শাসকের পতন হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী শাসক এবং তাঁর রক্ষাকবচ ও সমস্তঢাল পরাস্ত হয়েছে। আমাদের দেশেও এখানেও নুরেমবার্গ ট্রায়ালের মত বিচার হতে পারে। এখন খুনী, লুটেরা এবং জনগণের জান-মাল ভক্ষণকারী শাসকের দলদাস হয়ে যারা রাষ্ট্রশপথ ভঙ্গকরে জনগণের উপর অমানবিক নির্যাতন করে এখন বলছেন উপরের আদেশ পালন করেছি মাত্র— তাহলেই , নিস্তার হয়ে যাবে??
অপরাধী যেই ই হোকনা কেন? যতজনই হোকনা কেন তাঁদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে। তা না হলে দীর্ঘদিনের জুলুম, শোষণ-বঞ্চনা,নিপীড়ন-নির্যাতনের পরে বৈষম্যহীন সমাজ কাঠামো এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনের যে আকাঙ্খার প্রতিফলস্বরুপ যে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছে তা আগামী দিনে ক্রন্দনে পরিণত হয়ে যেতে পারে।

সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক
রাজশাহী মহানগর যুবদল।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক
রাজশাহী জেলা ছাত্রদল ।