পিরোজপুর প্রতিনিধি:-শুধুমাত্র বাদীর ঘনিষ্ঠ স্বজনদের সাক্ষ্য নিয়ে বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ উঠেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেন (পিবিআই) এর এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ওই কর্মকর্তার বিচার দাবি করে গত ৪ সেপ্টেম্বর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত শেখ নিয়ামত আলী পিবিআই এর পরিদর্শক। সম্প্রতি তিনি পিরোজপুর থেকে খুলনায় বদলি হয়েছেন।
পিবিআই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার উত্তর কলারদোয়ানিয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ সাইদুর রহমান জানান, ২০২২ সালে একই এলাকার বেলায়েত হোসেন সরদার জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তিনি (সাইদুর), অসুস্থ্য স্ত্রীসহ তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ, প্রতিবেশী ও স্বজনসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে পিরোজপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যেখানে তিনি বিবাদীদের বিরুদ্ধে মারধোর করে ঘরে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নাজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করে। তবে বিষয়টি তদন্ত করে নাজিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ রিয়াজুল ইসলাম ঘটনার কোন সত্যতা না পাওয়ায়, অভিযুক্তদের ওই ঘটনার সাথে কোন সম্পৃক্ততা নাই উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তবে এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বাদী বেলায়েত হোসেন আদালতে নারাজি দেওয়ার পর আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। এরপর পিবিআই এর পিরোজপুর কার্যালয়ে কর্মরত পরিদর্শক শেখ নিয়ামত আলী মামলাটি তদন্ত শেষে সাইদুর রহমান সহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
সাইদুর রহমানের অভিযোগ, পিবিআই এর তদন্ত কর্মকর্তা নিয়ামত আলী মোট ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহন করে আদালতে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন যাদের মধ্যে ৭ জন সকলেই বাদী বেলায়েত হোসেন এর স্ত্রী, মামা, চাচাতো ভাই এবং চাচাতো ভাইয়ের ছেলেসহ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন। এছাড়া মামলায় যে ২ জন নিরপেক্ষ সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে হায়দার আলী নামের একজন বাদীর আপন চাচাতো ভাই। এমনকি মামলা তদন্তের সময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, নিরপেক্ষ সাধারণ মানুষ কিংবা বিবাদী কারও কোন বক্তব্য গ্রহন করেন নাই তদন্ত কর্মকর্তা নিয়ামত আলী। এছাড়া মামলায় ঘটনার যে সময় উল্লেখ করা হয়েছে ওই সময় সাইদুর রহমান তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন বলেও দাবি তার। বাদীর কাছ থেকে বড় অংকের উৎকোচ গ্রহন করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অসত্য প্রতিবেদন দাখিল করেছেন বলেও অভিযোগ করেন সাইদুর রহমান।
সাইদুর রহমান আরও অভিযোগ করেন, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের দুই মাস পর তদন্ত কর্মকর্তা শেখ নিয়ামত আলী তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন। এরপর তার দুই জন আত্মীয়কে পিরোজপুর পিবিআই অফিসে নিয়ামত আলীর সাথে দেখা করতে পাঠান। দেখা করার পর নিয়ামত আলী চাপ প্রয়োগ করে তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা গ্রহন করেন এবং নিরপেক্ষ প্রতিবেদন দাখিলের আশ^াস দেন।
তাই বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্ত শেখ নিয়ামত আলীর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান সাইদুর রহমান।
অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা শেখ নিয়ামত আলী মুঠোফোনে জানান, তিনি তদন্ত করার সময় সাক্ষীরা নিরপেক্ষ বলে তাকে জানিয়েছিল। এ বিষয়ে তার খোঁজ নেওয়া উচিৎ ছিল কিনা এ প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেন নাই তিনি।
তবে তিনি দাবি করেন, বিবাদীদের তদন্ত প্রতিবেদন পছন্দ না হলে তা প্রত্যাখ্যান করে আইনজীবীর মাধ্যতে তারা আদালতে পুনঃতদন্তের আবেদন করতে পারেন।