গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি বলেছেন, ফ্যাসিস্টদের শক্তি খুব একটা বেশি না। ভারতের শক্তিতে শক্তিশালী হয়ে এখন তারা নানান ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামী লীগ এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা করে সেই ছবি পশ্চিমা বিশ্বে বিক্রি করতে চায়। এই ষড়যন্ত্র আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।

তিনি বলেন, ভারতের মিডিয়া এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লেগে গেছে। আর পশ্চিমাদের বোঝাতে চাইছে এখানে কোন সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ নিরাপদে নাই। এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে আমাদের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে তিনি গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গণসংহতি আন্দোলনের আয়োজনে গণসংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

জুনায়েদ সাকি বলেন, মুসলমানদের সংখ্যা বেশি, কাজেই তাদের দায়িত্বও বেশি। সমস্ত ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। তাদের কেউ যেন বঞ্চনার শিকার না হয়। বাংলাদেশে যদি একজন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কোনভাবে অপমানিত হয়, আক্রান্ত হয় তাহলে এটা মুসলমানদের জন্য গর্বের ব্যাপার মোটেই না। কাজেই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টরা তারা নিজেরা ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চায়। আমরা তাদের পরিস্কারভাবে বলি এই দেশের ছাত্র- জনতাকে আমাদের সন্তানদেরকে খুন করে পালিয়ে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। আপনাদের এই দেশের মাটিতে জায়গা হবে না।

তিনি আরো বলেন, জুলাই-আগস্টে আমাদের ছাত্র-শ্রমিকরা আত্মত্যাগ করেছে একটা সশস্ত্ররাষ্ট্র শক্তির বিরুদ্ধে। যারা লাঠিচার্জ করেছে, টিয়ারশেল- গ্যাস- ছড়্ড়া গুলি ছুড়েছে, মানুষ মরে সেই রকম গুলি তারা সরাসরি ছুড়েছে। সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে। দূর থেকে লক্ষ্য করে গুলি করে হত্যা করেছে। ১৬০০-র উপরে ছাত্র, শ্রমিক, তরুণ ও অভিভাবকরা প্রাণ দিয়েছেন। এটা বাংলাদেশের ১৯৭১ সাল ছাড়া আর কখনো ঘটে নাই- এত বড় সংগ্রাম, এত বড় আত্মত্যাগ। কিন্তু এই আত্মত্যাগের পরেই মানুষ যে বাংলাদেশ চায় সেই বাংলাদেশ কি আমরা পাবো ? এই প্রশ্নটা আমাদের করতে হবে। মানুষ কি চেয়েছে সেটা কিন্তু এই ছাত্ররা বলেছে। অন্তবর্তী সরকার তারাও বলেছে।

তিনি বলেন, আমরা একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চাই। যে বন্দোবস্ত শেখ হাসিনা বানিয়ে দিয়ে গেছে। কিংবা ৫৩ বছর ধরে যে বন্দোবস্ত চলছে। এই যে একটা স্বৈরাচারী বন্দোবস্ত এটাকে একটি ফ্যাসিস্ট বন্দোবস্ত করেছে শেখ হাসিনা। সংবিধানকে এমনভাবে বানিয়েছে যে সংবিধান পকেটে ঢুকিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা যায়। তারপরে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো সব পকেটে ঢুকিয়েছে। আইনকানুন এমন ভাবে বানিয়েছে, যাতে যা ইচ্ছা তাই করে ব্যবহার করা যায়। এভাবেই রাষ্ট্র বানিয়ে তারা সমস্ত বিরোধীদলের সদস্যদেরকে অত্যাচার করেছে। লক্ষ লক্ষ মামলা দিয়েছে লক্ষ কোটি কর্মীর বিরুদ্ধে। তারা গুম করেছে, খুন করেছে, বিনা বিচারে জেলে রেখেছে। এগুলো করেছে কারণ তারা যাতে সব লুটেপুটে খেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি মানে পুরো অর্থনীতির যে আকার ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই ৫০০ মিলিয়নের ডলারের আড়াই’শ মিলিয়ন ডলার তারা মেরে দিয়ে লুট করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। এই হচ্ছে আমাদের দেশের শাসন চিত্র। এই শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে এত আত্মত্যাগ দিয়ে যে অভ্যুত্থান তৈরি হয়েছে যে অন্তর্বরর্তী সরকার আজকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে নিচ্ছে। আমরা কি সবাই নিশ্চিত করে বলতে পারি যে আমরা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে পৌঁছাতে পারবো। আমরা কি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এই দেশে আবার ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে না? কোনটা ঘটবে এটা আপনাদের ওপর নির্ভর করে। এদেশে কি আবার ফ্যাসিবাদ গেড়ে বসবে নাকি আমরা একটা গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতামূলক বাংলাদেশ পাবো। এটা নির্ভর করে আপনাদের উপরে এ দেশের জনগণের উপরে। জনগণের যদি নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি থাকে জনগণের স্বার্থ দেখবে দেখভাল করবে তার স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করবে এইরকম রাজনীতিক শক্তি যদি গড়ে ওঠে তাহলে তার অর্জন কখনো ব্যাহাত হয় না।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক আমজাদ হোসেন। সদস্য সচিব লিটন হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পু, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য দীপক রায়, কালিয়াকৈর উপজেলার আহবায়ক মো. আশরাফুল ইসলাম খোকন প্রমুখ। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মী, সদস্য, শিক্ষক-ছাত্র ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।

জুনায়েদ সাকি বলেন, রাষ্ট্রের লক্ষ্য হচ্ছে তার নাগরিকদের জন্য সাম্য। মানবিক মর্যাদা হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা কিংবা নারী পুরুষ যেই হোন না কেন আপনার নাগরিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করবে রাষ্ট্র। স্বাভাবিক ন্যায় বিচার, ধনী গরীব বৈষম্য এই বৈষম্য এখানে থাকবে না। আপনি আদালতে গেলে ন্যায় বিচার পাবেন। তাহলে সাম্য মানবিক মর্যাদা সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষ ঐক্যবদ্ধ করেছিল। মানুষ আত্মত্যাগ করেছে প্রাণ দিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ।

এই দেশের জনগণ সাম্য মানবিক মর্যাদা সামাজিক ন্যায়বিচার পায় না। কারণ জনগণের শক্তি নাই। জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি নাই। আজকেও আমরা যদি জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে না পারি তাহলে এই যে, পুরনো বন্দোবস্ত ফ্যাসিস বন্দোবস্ত স্বৈরাচারী বন্দোবস্ত নানান ভাবে আবার ফিরে আসবেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি লাগবে। যারা ক্ষমতায় গিয়ে লুটেপুটে খাবে না। যারা দুর্নীতিকে দেয়ার চেষ্টা করবে। যারা আইন কারণে এমনভাবে বানাবে যে আইন আপনার ক্ষমতাকে কেড়ে না নিয়ে বরং জনগণকে ক্ষমতাশালী করবে। যে আইন শাসকদেরকে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য করবে। জনগণের সেই রাজনৈতিক শক্তি দরকার।