গত ১৫ বছর বিচার বিভাগের তেমন কোনো সংস্কার হয়নি জানিয়ে আদালতে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে প্রশ্ন করেছেন বিচারক।আজ সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালতে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানিকালে তিনি এ বিষয়ে জানতে চান।

আজ আনিসুল হকের উপস্থিতিতে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির জন্য আনিসুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় এজলাসে থাকা আসামির ডকে দাঁড়িয়ে ছিলেন আনিসুল হক। অন্যান্য মামলার শুনানি চলায় কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর বিচারক তাকে ডকে থাকা বেঞ্চে বসতে বলেন। এরপর তার গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। দুদকের প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম ও মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর মামলার বিস্তারিত আদালতের সামনে তুলে ধরেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা শুনানি করেন।

এক পর্যায়ে বিচারক আনিসুল হককে উদ্দেশ করে বিচার বিভাগের দৈন্যদশা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি মামলা জটের চিত্র তুলে ধরেন। বিচারক বলেন, ‘ঢাকায় লক্ষাধিক নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট (এনআই) অ্যাক্ট মামলা পরিচালনার জন্য মাত্র সাতটি যুগ্ম দায়রা জজ আদালত রয়েছে, যা মামলা নিষ্পত্তির জন্য অপ্রতুল। অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারককে টিনসেড বিল্ডিংয়ে বসে বিচার কাজ পরিচালনা করতে হয়। গত ১৫ বছরে বিচার বিভাগের তেমন কোনও সংস্কার হয়নি।’

এ সময় আনিসুল হক আদালতের অনুমতি নিয়ে বলেন, ‘আমি আইনমন্ত্রী থাকাবস্থায় প্রতি বছর লোকবল নিয়োগের জন্য রিকুইজিশন দিতাম। আইন মন্ত্রণালয়ের জন্য মাত্র ১৩ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ ছিল। বিচার বিভাগের যত ইমপ্রুভমেন্ট হয়েছে, তা আমার করা। তবে আমার একটাই দুঃখ, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের জন্য আলাদা একটি ভবন করতে পারিনি। সামনে ভবন নির্মিত হবে। এই সংকট আমরা কাটিয়ে উঠব।’

এরপর বিচারক আবারও বলেন, ‘সব কথা বলা যায় না। একটা টিভি সেন্টারের জন্য যে বাজেট সেই বাজেটও এই মন্ত্রণালয় পায় না। এছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতার জন্য কাজ তেমন আগায় না। বিচার বিভাগের উন্নয়নে আমলাতন্ত্র একটা বড় বাধা। এখনও আমরা পুরনো আইন যেসব ব্রিটিশরা তৈরি করে দিয়েছিল সেসবের মধ্যে আটকে আছি। আইনগুলো আপডেট করা দরকার। দেওয়ানি কার্যবিধি এমন যে একটা দেওয়ানি মামলা দিয়ে ১০০ বছরও ঘুরানো যায়। সারা দেশে প্রায় ১৫ লক্ষাধিক সিভিল মামলা চলমান। আর বিচারক মাত্র ৩০০ জন।’

এরপর আদালত আনিসুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে, আজ একই আদালতে আনিসুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। ওইদিন আদালত আসামি আনিসুল হকের উপস্থিতিতে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির জন্য ২০ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। গত ১ জানুয়ারি আনিসুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম।