নিজস্ব প্রতিবেদক: কার খামখেয়ালি পানায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নিহত, আহত ও সমাজের অসহায়সহ ২৫ হাজার পরিবার বঞ্চিত হচ্ছে আয়বর্ধক উন্নয়ন প্রকল্প থেকে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় চলমান ৩৩টি অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এসব প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৯৬৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে ১৫৫ কোটি টাকার আয়বর্ধক কল্যাণ উপকরণ বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন বিভিন্ন জেলার পিছিয়ে পড়া, নদী ভাংগনের শিকার অসহায় জনগোষ্ঠী। ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ রেজুলেশন এর মাধ্যমে জানানো হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত নিহত পরিবারকে এই প্রকল্পের আওতায় এনে সহযোগিতা করার জন্য। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির এসব উপকরণ শুধুমাত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ব্যক্তি ও নিহতদের স্বজনদের জীবিকা নির্বাহে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
সামাজিক সুরক্ষা সেক্টরের অধীনে বিগত সরকারের আমলে প্রান্তিক কৃষক, অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত, অসহায় নদী ভাংগনের শিকার ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। সরকার ও এনজিও’র সঙ্গে সমন্বয় করে এসব জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করতে প্রকল্পগুলো চালু করা হয়। তবে দীর্ঘ ৪বছর চেষ্টার পর ৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫৫ কোটি টাকা অনুমোদনে হাতে নেয়া আয়বর্ধক কল্যাণ উপকরণ অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত, অসহায় ও পিছিয়ে পড়া, নদী ভাংগনের শিকার জনগোষ্ঠীকে দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। চলতি অর্থবছরের এডিপিভুক্ত উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার কার্যবিবরণীতে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ব্যক্তি ও নিহতদের স্বজনদের জীবিকা নির্বাহের জন্য আয়বর্ধক এসব কল্যাণ উপকরণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এজন্য এসব প্রকল্পের কার্যক্রম ও এলাকা পরিবর্তন করে সংশোধিত ডিপিপি শিগগিরই মন্ত্রণালয়ের পাঠাতে বলা হয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি রয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এনজিওদের। তারা বলছেন, একেকটি প্রকল্পের আওতায় ৩-৪ হাজার উপকারভোগীদের সহায়তা করা হয়। ৭টি প্রকল্পে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যা থেকে অন্তত ২৫ হাজার উপকারভোগী আত্মকর্মসংস্থান করতে পারতো। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে এসব উপকারভোগীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
এনজিও’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্প চলমান এলাকাগুলোতে এনজিও কর্মকর্তাদের সম্মানহানির উপক্রম হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে উপকারভোগীদের নামের তালিকাসহ স্থানীয় পর্যায়ে ভেরিফিকেশনের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর তাদেরকে কোনো সহযোগিতা করতে না পারায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। যদি সরকার এসব উপকারভোগীদের সহায়তা থেকে ফিরে আসে তাহলে পরবর্তীতে এই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে। নারী উন্নয়ন ফোরাম, স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিস ডেবেলপয়েন্ট এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিডার), বনফুল উন্নয়ন সংস্থা (বিইউওএস), সোশ্যাল ডেভেলপয়েন্ট সার্ভিস জয়পুরহাট (এসডি এস), প্রচেষ্টার (স্বেচ্ছাসেবী সমাজ কল্যাণ সংস্থা), রাইজিং এইড ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ পুওর ওমেন ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কিশোরগঞ্জ, তারা বলেন, এই প্রকল্পগুলোর অনুমোদন পেতে আমাদের দীর্ঘ চার বছরের মতো সময় লেগেছে। মাঠ পর্যায় থেকে আমরা মানুষের তথ্য হালনাগাদ করেছি। শুধুমাত্র বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্তদের সহায়তা করা হলে এসব অসহায় মানুষ বঞ্চিত হবে। তবে সরকার চাইলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ও নিহতদের স্বজনদের পাশাপাশি সাধারণ অসহায় মানুষকে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসতে পারে। এজন্য ডিপিপি সংশোধনের প্রয়োজনও হবে না। বনফুল উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বলেন, মাঠ পর্যায়ে আমরা অসহায় মানুষদের থেকে তথ্য নিয়েছি। তাদের কাছে হেনস্তার শিকার হতে হবে। আমরা বলেছিলাম, বৈষম্যবিরোধীদের সহায়তা দিয়ে বাকিগুলো অসহায় মানুষকে দেয়ার জন্য। তাহলে উভয়পক্ষের জন্যই ভালো হতো।
কিন্তু প্রকল্প গুলির সংশ্লিষ্ট এলাকার অসহায় হত দরিদ্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জন্য অনুমোদন হওয়ার কারনে সংস্থা প্রতিনিধিগণ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ও নিহিতদের সাথে ঐ এলাকার অসহায় দরিদ্রদেরকে ঐ সকল কল্যাণ অনুদান প্রদান করতে চায় মর্মে মত প্রকাশ করেন যার ফলে DPP পরিবর্তন করা লাগবে না শুধু উপকারভোগীদের তালিকা পরিবর্তন করতে হবে।
প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, বৈশ্বিক মহামারির প্রেক্ষাপটে অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত ও কর্মহীন জনগোষ্ঠীদের পুনর্বাসন ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা; জয়পুরহাট জেলার প্রান্তিক কৃষক, প্রতিবন্ধী, সুবিধাবঞ্চিত এবং বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলাদের আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা; কিশোরগঞ্জ জেলার বেকার ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা; কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার হতদরিদ্র, অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত মহিলাদের বিভিন্ন আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পে ২৩ কোটি ৫ লাখ টাকা; চা বাগান শ্রমিক/পোষ্য ও প্রকল্প এলাকার অসচ্ছল পরিবারের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম ও সেবা প্রদান শীর্ষক প্রকল্পের জন্য ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা; মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার অসহায়,নদী ভাংগনের শিকার ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থানমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের জন্য ২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা; আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি এবং আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে পরিবার কল্যাণ ও দারিদ্র্য হ্রাস প্রকল্পের জন্য ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ও চা সম্প্রদায়ের জন্য সচেতনতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে (আত্ম উন্নয়ন) শীর্ষক প্রকল্পের জন্য ১৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদন হয়।
এসব প্রকল্পের আওতায় গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, সেলাই মেশিন, প্রতিবন্ধীদের হুইলচেয়ার, চা ও মুদি দোকানসহ মালামাল, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরিসহ নানা ধরনের আয়বর্ধক কল্যাণ উপকরণ দেয়া হবে। যা দিয়ে পিছিয়ে পড়া এসব জনগোষ্ঠী তাদের আত্মকর্মসংস্থান ও জীবনমান উন্নয়ন করতে পারে।
এসব প্রকল্পের সঙ্গে যৌথভাবে যুক্ত এনজিও’র কর্মকর্তারা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বরাবর একটি চিঠিও দিয়েছেন। চিঠিতে তারা জানিয়েছেন, পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপকারভোগীদের (অসহায়, হতদরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী) তালিকার খসড়া থেকে চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পথে। উপকারভোগীরা এখন ডিপিপিতে উল্লিখিত আয়বর্ধক কল্যাণ উপকরণ থেকে বঞ্চিত হলে তাদের কর্মস্পৃহা নষ্ট হবে এবং তারা অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়তে পারে। তাই উপকারভোগীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্ম এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ব্যক্তি ও নিহতদের স্বজনদের প্রকল্পে উল্লিখিত আয়বর্ধক কল্যাণ অনুদান প্রদান করার মাধ্যমে সহযোগিতা করা যায়। এতে ডিপিপি সংশোধন করার প্রয়োজন হবে না এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
এখানে উল্লেখ্য উক্ত অনুমোদিত প্রকল্পের ৮০% টাকা সরকার এবং ২০% টাকা সংস্থার। তাই প্রত্যাশী সংস্থার (এনজিও) দের অবদান একেবারে বাদ দেওয়ার সুযোগ নাই।

আমরা বিশস্থ সুত্রে জেনেছি যে, পূর্বের মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর ডাঃ সালেহ আহম্মদ, (এখন তিনি নেই) অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোঃ নাজমুল আহসান তারা উপদেষ্টা মহোদয় কে ভূল বুঝিয়েছেন এবং মহাপরিচালক ছাড়া বাকী দুইজন দীর্ঘদিন যাবত একই চেয়ারে অবস্থান করছেন বিভিন্ন রকম রাষ্ট্রের সুবিধা নেওয়ার জন্য, অন্যের ক্ষতি করে তারা আনন্দ পান।
এছাড়াও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট লোকজন বিশেষ করে এনজিওর কর্তা ব্যক্তিরা নানান ভাবে চেষ্টা করেও দিনের পর দিন ঘোরাঘুরি করেও উপদেষ্টা মহোদয়ের সাক্ষাৎ অর্জন থেকে ব্যর্থ হয়েছেন। কোনোভাবেই তাদেরকে উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে ভিড়তে দেওয়া হয়নি। যার সাথে জড়িত ছিল উপদেষ্টা মহোদয়ের অফিসের একদল সিন্ডিকেট সদস্য। তারা বুঝিয়েছেন উপদেষ্টা মহোদয় আপনাদের সাথে কথা বলতে চান না এবং আপনাদের দেখলেই তিনি বিরক্ত হবেন। মূল সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্যই এ সমস্ত পায় তারা করেছে একটি চক্র।