বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঐক্য বা রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম। গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব ভাঙ্গা উপজেলার দক্ষিণপাড় বাসস্ট্যান্ডে উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফয়জুল করীম বলন, ‘একজন ব্যক্তি (জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান) আমাদের এখানে এসেছিলেন সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য, ভিজিট করতে। হয়তো অনেকে ভুল বুঝতে পারেন। জামায়াকে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে আমাদের ঐক্য অথবা রাজনৈতিক কোনো আলোচনা হয়নি। ’
তিনি বলেন, ‘তার ওইদিন (ডা.শফিকুর রহমানের) বরিশালে প্রোগ্রাম ছিল। সেই ফাঁকে আমাদের চরমোনাইতে এসেছিলেন সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে। আমাদের উভয়ের সম্মতিতেও কোনো প্রোগ্রাম ছিল না। ’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির বলেন, ‘নবীর (সা.) আদর্শ হচ্ছে কোনো মেহমান আসলে তাকে মেহমানদারি করানো, তাকে সম্মান দেখানো- এটাই হচ্ছে নবীর (সা.) আদর্শ। সেটাই আমরা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইসলামের জন্য ঐক্য করতে আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে আসছি। ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হলে ঐক্য করতে আগ্রহী। ’
এর আগে গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফয়জুল করীম বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম ২৪-এর স্বাধীনতায় বৈষম্য দূর হবে, বিচার বিভাগ স্বাধীন হবে, ঘুষ দূর হবে, দুর্নীতি দূর হবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে, কিন্তু আমরা কী দেখতে পাচ্ছি? যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল সবাই জেলে ছিল, জামিন পায় নাই। এখন আওয়ামী লীগ পালিয়েছে, যারা আছে তাদের সমর্থকরা জেলে গেছে জামিন নাই। ’
প্রশ্নে রেখে তিনি বলেন, ‘তার মানে কী? বিচার বিভাগ স্বাধীন নাই। যদি বিচার বিভাগ স্বাধীন হতো তাহলে যে দলই ক্ষমতায় আসত, যার অন্যায় পাবে তার বিচার হবে, মানুষ মুক্তি পাবে। বিচারক বিচার করবে আইন অনুযায়ী, যেই বিচার বিভাগ স্বাধীন হবে না, সেই বিচার বিভাগ আমরা চাই না। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে সেই লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন করেছিলাম।’
ইসলামী আন্দোলনের এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘ভেবেছিলাম এবার আর চাঁদাবাজি থাকবে না, দখলদারি থাকবে না, গুম-হত্যা থাকবে না, গুন্ডামি থাকবে না, আমার মা-বোনেরা ধর্ষিত হবে না, অন্যায়-জুলুম থাকবে না, ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করবে, চাকুরীজীবীরা নিরাপদে চাকরি করবে। দুঃখের বিষয়, কী দেখছি? আবারও দখলবাজি, ঘুষ, বাণিজ্য চলছে, খুন, ধর্ষণ চলছে, অন্যায়-অত্যাচার চলছে, অফিস-আদালতে ঘুষ বাণিজ্য বেড়েই চলছে। ’
ফয়জুল করীম বলেন, ‘শুধু অন্যায়কারীদের চেহারার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু ঘুষ বন্ধ হয় নাই, চাঁদাবাজি বন্ধ হয় নাই, দখলদারি বন্ধ হয় নাই, সবই চলছে। এজন্যই কি হাজার হাজার ছাত্রদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়ে স্বাধীন হলো? স ব অন্যায়কে বন্ধ করতে হলে ইসলামের আদর্শ ধারণ করতে হবে।কোরআনকে ফলো করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা নৌকার রাজনীতি করে তারা নৌকা চালাতে পারে না, যারা ধানের শীষের রাজনীতি করে তারা ধান কাটতে পারে না। তবে যারা পাখা মার্কার রাজনীতি করে তারা পাখা চালাতে পারে, অন্যরাও পাখা চালাতে পারে। এ জন্যই পাখা মার্কা জনসাধারণের শান্তির প্রতীক। ‘
ভাঙ্গা উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি হান্নান মাতুব্বরের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন ফরিদপুর জেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মুফতি মোস্তফা কামাল, সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মিজানুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জাহিদ হাসান, সদরপুর উপজেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদ মাস্টার, চরভদ্রাসন উপজেলার সভাপতি মুফতি সেলিম হোসাইন প্রমুখ।