বেক্সিমকো শ্রমিকদের আন্দোলনকালে গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় কাশিমপুর থানায় আরো দু’টি মামলা মামলা হয়েছে। এনিয়ে একইদিনের ঘটনায় মোট ৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আরো ৩৩জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এনিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৭ জনে।
কাশিমপুর থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ হওয়া ১৬টি কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকরা গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। এসময় তারা অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুর, একটি ট্রাক ও তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে। তারা স্থানীয় গ্রামীন ফেব্রিক্স এন্ড ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসব ঘটনার মধ্যে গ্রামীণ ফেব্রিক্স কারখানার পক্ষ থেকে বৃহষ্পতিবার একটি মামলা দায়ের করেন কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোঃ তরিকুল ইসলাম। পরে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাত ২-৩শ’ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন বাসের মালিক হাবিবুল্লাহ আকন্দ। এ মামলায় শুক্রবার ৩জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের ৭দিনের রিমান্ড চেয়ে গাজীপুর মহানগর আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও পুলিশের উপর হামলা ও কর্তব্যকাজে বাঁধা দেওয়ার ঘটনায় অজ্ঞাত ৪-৫ হাজার জনকে আসামী করে শিল্প পুলিশের এসআই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে একই থানায় আরো একটি মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরো জানান, গ্রামীন ফেব্রিক্স এন্ড ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করার মামলায় শুক্রবার আরো ৩০জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১০জনের ৫দিন করে রিমান্ড চেয়ে গাজীপুর মহানগর আদালতে পাঠানো হয়। আগামী রবিবার তাদের রিমান্ড শুনানী হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে এ মামলায় বৃহষ্পতিবার বিকেলে দুই শ্রমিক নেতাসহ ৪জনকে গ্রেপ্তার করে ৫দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত ওই ৪জনকে একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, গাজীপুর মহানগরীর সারোবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় ৪২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা কাজ করেন। ওই কারখানাগুলোর মালিক সালমান এফ রহমান। গত কয়েক মাস ধরে এসব শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করতে পারে নি কর্তৃপক্ষ। এজন্য বকেয়া পরিশোধের দাবিতে শ্রমিকরা বেশ কয়েকদফা আন্দোলনে নেমে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে সরকার ঋণ দিয়ে শ্রমিকদের আংশিক বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করে। এদিকে গত ১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেক্সিমকোর শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির সভার সিদ্ধান্তের পর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ ১৬ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকরা বুধবার বিকেলে বিক্ষোভ ও চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় শ্রমিকরা অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুর এবং একটি ট্রাক, ৩টি বাস ও গ্রামীন ফেব্রিক এন্ড ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় অগ্নিসংযোগ করে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে। পরে আইন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়ে রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।