কহর দরিয়াখ্যাত টঙ্গীর তুরাগ পাড়ের বিশ^ ইজতেমাস্থল এখন দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লিদের পদচারণায় মুখরিত। শিল্প নগরী টঙ্গী এখন যেন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। এপর্বের দ্বিতীয়দিন শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুক বিহীন বিয়ে। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে মুসলিমবিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপের তিনদিন। এদিন সকাল ৯টা হতে সাড়ে ৯টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ব তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি। ইজতেমা ময়দানে বিদেশী নিবাসের পূর্বপার্শ্বে বিশেষভাবে স্থাপিত মঞ্চ থেকে এ মোনাজাত পরিচালনা করা হবে। মোনাজোতে বিশে^র সকল মানুষের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হয়। এতে প্রায় ২৫-৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নিবেন বলে আশা করছেন ইজতেমা আয়োজক কমিটি। এদিকে আখেরি মোনাজাতে মুসল্লীদের আসা ও যাওয়া নিরাপদ করতে শনিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে মোনাজাত অনুষ্ঠাণ পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানগামী সড়কসমূহে যানবাহন চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে পুলিশ।
এবারের ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপের দ্বিতীয় দিন শনিবার আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-বিধান ও রাসুল (সঃ) প্রদর্শিত তরিকা অনুযায়ী জীবন গড়ার আহ্বান জানিয়ে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি জিকির আসকার, ইবাদত বন্দেগী আর ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র কোরআনের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ানের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছেন। মহান আল্লাহতাআলার নৈকট্য লাভের ব্যাকুলতায় দ্বীনের দাওয়াতে মেহনত করার জন্য ইসলামের মর্মবাণী সর্বত্র পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দলে দলে ছুটে আসছেন টঙ্গীর তুরাগ তীর ইজতেমা ময়দানে। শনিবারও টঙ্গী অভিমুখী বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছিল মানুষের ভিড়। রবিবার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। মূল প্যান্ডেলে স্থান না পেয়ে অনেক মুসুল্লী নিজ উদ্যোগেই প্যান্ডেলের বাইরে পলিথিন সিট ও কাপড়ের সামিয়ানা টানিয়ে তাতেই অবস্থান নিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার বন্দনা, আরজ-গুজার, শোকরানা আর ইবাদত বন্দিগীতে মশগুল মানুষের কলরব। সৃষ্টিকর্তার দিদার লাভের জন্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পায়ে হেঁটে, বাস ও ট্রেনে করে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে সমবেত হয়েছেন। ইজতেমা মাঠে উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশে যথারীতি তাবলীগের ছয় উসুল অর্থাৎ কালেমা, নামাজ, এলেম ও জিকির, একরামুল মুসলেমিন, সহীহ নিয়ত ও তাবলীগ বিষয়ে আমবয়ানের মাধ্যমে ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন (প্রথম ধাপ) শনিবার অতিবাহিত করছেন মুসল্লীরা।
ইজতেমার মুরুব্বীরা জানান, আগে একপর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হলেও মতপার্থক্যের কারণে গত ২০১৫ সাল হতে দেশের একাধিক পর্বে বিভক্ত করে ইজতেমার আয়োজন করা হচ্ছে। এবারেও ইজতেমা দুই ভাগে (পর্ব) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্বের নেতৃত্বে থাকছেন শুরায়ী নেজামের (জোবায়ের পন্থী) তাবলীগ অনুসারীগণ। ছয় দিনব্যাপী এ পর্বের ইজতেমা আবার দু’টি ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সা’দপন্থিদের তিনদিনের ইজতেমা হওয়ার কথা রয়েছে। ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপে ৪২ জেলার মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করছেন। বাকি ২২ জেলার মুসল্লিরা আগামী ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপে অংশগ্রহণ করবেন।
দ্বিতীয় দিন (শনিবার) যারা বয়ান করলেন ॥
ইজতেমায় জোবায়ের অনুসারীদের মিডিয়া সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা মোঃ হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ি বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন শনিবার মুসুল্লীদের উদ্দেশ্যে বাদ ফজর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশেদ। এরপর বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা। বাদ আছর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাছান। বয়ান শেষে মাওলানা তিনি যৌতুক বিহীন বিয়ে পড়ান। এরপর বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। এর আগে সকাল ১০ টায় ইজতেমা ময়দানের খিত্তায় খিত্তায় মুসুল্লীদের তালিম হয়। ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা ওলামাদের উদ্দেশ্যে বিশেষ বয়ান করেন। ভারতের অপর মুরুব্বী মাওলানা আকবর শরিফ তলাবাদের (মাদ্রাসার ছাত্রদের) উদ্দেশ্যে নামাজের মিম্বরে বয়ান করেন।
তিনি আরো জানান, এ পর্বের আখেরী মোনাজাতের দিন রবিবার বাদ ফজর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। তাঁর বয়ানের পর হতে আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত নসিহতমূলক বক্তব্য দিবেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা।
যা বয়ান করলেন ॥
তাবলিগ জামাতের মুরুব্বীগণ ইজতেমার সুবিশাল ময়দানে সমবেত দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশ্যে তাবলিগের ছয় উসুল যথা কালিমা, নামাজ, ইলম ও জিকির, ইকরামুল মুসলিমিন, তাসহিয়ে নিয়ত এবং তাবলিগ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন। বয়ানে তাবলীগ মুরব্বীরা বলেন, যতদিন দ্বীন থাকবে, তত দিন দুনিয়া থাকবে। আর দ্বীন টিকে থাকবে দাওয়াতের মাধ্যমে। যুগে যুগে নবী-রাসুলগণ দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করে গেছেন। ফেরাউনের কাছেও দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে আল্লাহ্ হযরত মুসা (আ:) কে পাঠিয়েছিলেন। আল্লাহ যাল্লে জালালুহু নবী-রাসুলদেরকে তাদের নিজের পরিবার ও বিভিন্ন গোত্রের মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:) কে সারা দুনিয়ায় দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন। আজ তিনি নেই। এ কাজের জিম্মাদারী এখন তার উম্মতের ওপর।
শেষদিনের আখেরী মোনাজাত ও বয়ান ॥
বিশ্ব তাবলীগ জামাতের প্রথম পর্বের শেষদিন রবিবার শীর্ষ মুরব্বি বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি। এরআগে সকালে হেদায়াতি বয়ান ও বিশেষ নসিহত করা হবে।
বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ ॥
বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের ১৫-২০জন শুরা সদস্য ও বুজর্গ বয়ান পেশ করেন। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ হচ্ছে। বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরুব্বী মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শুনান। মূল বক্তা বয়ানের একটি নির্দিষ্ট অংশ শেষ করার পর অনুবাদের জন্য বিরতি দেন। অনুবাদ শেষ হলে তিনি আবার বয়ান শুরু করে। এভাবেই ইজতেমা ময়দানে তাবলীগ জামাতের মুরব্বীদের বয়ান চলে।
অনুষ্ঠিত হলো যৌতুকবিহীন বিয়ে ॥
বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুক বিহীন বিয়ে। সম্পূর্ণ শরীয়ত মেনে তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ি ইজতেমার দ্বিতীয় দিন (শনিবার) বাদ আছর ইজতেমার বয়ান মঞ্চের পাশেই বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর বসে। এ আসরে ৬৩টি বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাসান এসব বিয়ে পড়ান। তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আসর বয়ান মঞ্চের পাশে বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর। কনের সম্মতিতে ও তার অনুপস্থিতিতে বর এবং কণে পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় ওই বিয়ে। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ‘মোহর ফাতেমী’র নিয়মানুযায়ী। এ নিয়ম অনুযায়ী মোহরানার পরিমান ধরা হয় দেড়শ’ তোলা রুপা বা উহার সমমূল্য অর্থ। বিয়ের পর নব-দম্পতিদের সুখ-সমৃদ্ধিময় জীবন কামনা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করে মোনাজাত করা হয়। এসময় মঞ্চের আশপাশের মুসল্লিদের মাঝে খোরমা খেজুর ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
তাশকিলের কামরায় চিল্লাভুক্ত মুসুল্লী ॥
ইজতেমার প্যান্ডেলের উত্তর-পশ্চিমে তাশকিলের কামরা স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন খিত্তা থেকে বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় অংশ গ্রহনেচ্ছু মুসুল্লীদের এ কামরায় আনা হচ্ছে এবং তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। পরে কাকরাইলের মসজিদের তাবলিগি মুরুব্বীদের চ’ড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ি এলাকা ভাগ করে তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাবলিগি কাজে পাঠনো হবে।
আখেরী মোনাজাতের প্রস্তুতি ॥
বিশ^ ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক মোঃ হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, রবিবার অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমার মূল আকর্ষণ আখেরি মোনাজাত। ইজতেমা মাঠের বিদেশি নিবাসের পূর্বপাশে বিশেষ মোনাজাত মঞ্চ থেকে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে হবে হেদায়তি বয়ান। রবিবার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লীদের ঢল অব্যাহত থাকবে। ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে বিপুল সংখ্যক মহিলা টঙ্গীর আশপাশে এসে ইতোমধ্যে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকে তাদের আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে উঠেছেন। রবিবার হেদায়তি বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের তিন দিনের প্রথম দফা। এরপর সোমবার হতে শুরু হবে তিনদিনের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দফা।
এবার প্রায় ৬ হাজার জামাত তাবলিগের দাওয়াত নিয়ে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে ॥
ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক মোঃ হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, তাবলিগের একমাত্র কাজই আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকা। রাসূল (সাঃ)-এর বিদায় হজের ভাষণের মূল বাণী হিসেবে আমরা আল্লাহর পথে ডেকে থাকি। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই এর একমাত্র লক্ষ্য। একমাত্র আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের একক আনুক’ল্যে এই ইজতেমা হয়ে থাকে। টঙ্গীর এই ইজতেমা থেকেই বিশ্বের অন্ততঃ ১৫০টি দেশে দাওয়াতের এই কাজ করা হয়। প্রতি বছর টঙ্গী ইজতেমা থেকেই পাঁচ থেকে ছয় হাজার জামাত বিশ্বব্যাপী পাঠানো হয়। আগত বছরের বিশাল কর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা টঙ্গী থেকেই হয়। তিনি সকল মুসলমানদের কিছুটা সময় হলেও ইজতেমায় ব্যয় করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এবারো প্রায় ছয় হাজার জামাত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাবলিগের কাজে বেরিয়ে যাবে।
আরো এক মুসল্লির মৃত্যু ॥
বিশ^ ইজতেমা ময়দানে আগত আরো এক মুসল্লি শুক্রবার মারা গেছেন। তার নাম ইয়াকুব আলী (৬০)। তিনি হবিগঞ্জের বাহুবল থানার রাঘবপুর এলাকার মৃত নওয়াব উল্লার ছেলে। এনিয়ে ইজতেমা ময়দানে আগত মোট ৪জন মুসল্লি শনিবার বিকেল পর্যন্ত মারা গেছেন। তাদের প্রায় সবাই হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার।
ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্পে চিকিৎসা ॥ শনিবার সকাল থেকে ইজতেমা ময়দান সংলগ্ন ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলোতে মুসুল্লিদের চিকিৎসা নিতে ভিড় দেখা গেছে। মুসুল্লীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য ময়দানের আশপাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠাণ ও সংগঠণের পক্ষ থেকে স্থাপিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। এসব চিকিৎসা ক্যাম্পে চিকিৎসা নিতে আসা অসুস্থ্যদের অধিকাংশই ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, আমাশয়, শ্বাসকষ্টের রোগী।
বিশেষ ট্রেন ॥ বিশ্বইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া আখেরি মোনাজাতের আগে ও পরে সকল ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে বলে জানিয়েছেন টঙ্গীর রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা।
বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মুসল্লি ॥ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এক সূত্র জানায়, শনিবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশের কয়েক হাজার সংখ্যক বিদেশী মুসল্লি ইতোমধ্যে ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। আরো বিদেশী মেহমান টঙ্গীর পথে রয়েছেন। বিভিন্ন ভাষা-ভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানে বিদেশী মেহমানদের জন্য পৃথক বিদেশী নিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে বাড়তি নিরাপত্তা ও জিএমপি কমিশনারের প্রেসব্রিফিং ॥
শনিবার মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি’র) কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, এ পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমায় কোন নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল না। বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে গাজীপুর পুলিশ প্রশাসন বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। ঢেলে সাজানো হয়েছে ট্রাফিক বিভাগকে। যানজট নিয়ন্ত্রণে নানা মুখী পরিকল্পনা রয়েছে। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে মুসুল্লীরা যেহেতু ইজতেমা ময়দানে আসবেন, সেহেতু শনিবার মধ্যরাত থেকে কয়েকটি সড়কে যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে শনিবার দিবাগত রাত ১২টার পর হতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে ভোগড়া বাইপাস, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের স্টেশনরোড হতে মীরের বাজার সড়ক এবং আব্দুল্লাহপুর ব্রিজ থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল ও টঙ্গীর স্টেশন রোড হয়ে কামারপাড়া সড়কে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে এসব রুটের যানবাহন বিকল্প পথে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলাচল করবে। আখেরি মোনাজাতের দিন রবিবার সকাল থেকে মুসুল্লীদের সুবিধার্থে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে ইজতেমাস্থল পর্যন্ত কিছু শ্যাটল বাস চলাচল করবে।
এসময় তিনি বলেন, রবিবার সকাল ৯টা হতে সাড়ে ৯টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ইজতেমার মুরব্বিরা।
শুরায়ে নেজামের প্রেসব্রিফিং ॥
এদিকে শনিবার দুপুরে শুরায়ে নেজামের পক্ষ থেকে পৃথক এক প্রেসব্রিফিংয়ে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শুরায়ে নেজামের শীর্ষ মুরুব্বি মুফতি কেফায়তুল্লাহ আজহারী বলেন, আমরা এই সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বিগত সরকার আমাদের দাবি সত্ত্বেও দুই পর্বে ইজতেমা করতে দেয়নি। ফলে আমাদের ইজতেমায় অনেক মানুষের সমাগম হতে পারেনি।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর কাকরাইল জামে মসজিদে প্রথম বিশ্ব ইজতেমার প্রচলন শুরু হয় ১৯৪৬ সালে। এরপর ১৯৪৮ সালে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামে। ১৯৫৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। ১৯৬৬ সাল থেকে গাজীপুরের শিল্প নগরী টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সব মিলিয়ে ধারবাহিকভাবে বিশ্ব ইজতেমা পরিচালিত হচ্ছে।
মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দান থেকে ॥