তানভীর ইসলাম আলিফ হোমনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:

কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় এবার আলুর বাম্পার বেশ ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও পলি মাটির কারণে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হলেও ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। উপজেলায় কোল্ড স্টোরেজ না থাকায় দরপতনের আশঙ্কা আরও বেড়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মেঘনায় ৩১৩ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। এবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭২ হেক্টরে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫৯ হেক্টর বেশি। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, উন্নত জাতের চাষ ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ফলন ভালো হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত সংরক্ষণ সুবিধা না থাকায় লাভের নিশ্চয়তা নিয়ে শঙ্কা কাটছে না কৃষকদের।

স্থানীয় কৃষকদের ভাষ্য, আলু চাষে তাদের খরচ বেড়েছে। প্রতি ৩০ শতক জমিতে আলু উৎপাদনে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। জমি থেকে আলু তুলতে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বাবদ বিঘাপ্রতি ৫ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। তবে বাজারে আলুর দাম ক্রমেই কমছে, যা তাদের জন্য নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গোবিন্দপুর ইউনিয়নের চাষি আল আমিন বলেন, “কয়েকদিন আগেও প্রতি ৮০ কেজির বস্তা ১৪০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন তা নেমে এসেছে ১২৫০ টাকায়। ন্যায্য মূল্য না পেলে আমাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।”

বিজয়নগর গ্রামের কৃষক শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি ১২০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। ফলন ভালো হলেও দরপতনের কারণে লাভ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এখানে কোল্ড স্টোরেজ নেই, ফলে সংরক্ষণের সুযোগ নেই। এছাড়া সরকারি কোনো সহায়তা আমরা পাই না। প্রতি বিঘায় প্রায় ৪ টন আলু উৎপাদন হবে বলে আশা করছি।”

হোমনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, “উপজেলার মাটি আলু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। কৃষকদের সার, কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে উৎপাদনে।” তিনি আরও বলেন, “অনেক কৃষক পুরনো জাতের ডায়মন্ড আলু চাষ করেন, যা তুলনামূলক কম ফলন দেয়। আমরা তাদের উন্নত জাতের চাষে উৎসাহিত করছি।”

উৎপাদন ভালো হলেও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। তারা সরকারি সহায়তা এবং কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারিরও দাবি জানিয়েছেন তারা।