আকাশ ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী, যেখানে তিনি অনায়াসে উড়তেন এবং হাজারো যাত্রীকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতেন। অথচ নিয়তির এক নির্মম খেলায় প্রকৃতি, যা এতদিন তাঁকে রক্ষা করেছিল, শেষপর্যন্ত তাঁকে অনন্ত জলধারায় নিয়ে গেল।
গত ৮ জুন, রোববার, কানাডার লিন্ডসে, অন্টারিও-তে এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর অভিজ্ঞ বোয়িং ৭৮৭ পাইলট ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান গুড্ডু এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সাবেক বিজিএমইএ সহ-সভাপতি ও টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহিল রাকিব।
এক আনন্দদায়ক ছুটি থেকে শোকাবহ পরিণতি, ক্যাপ্টেন গুড্ডু কেবল একদিন আগে তাঁর স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে নিয়ে কানাডায় পৌঁছেছিলেন, যেখানে তাঁরা বড় মেয়ের সঙ্গে পুনর্মিলনের পরিকল্পনা করেছিলেন। ঘটনার দিন তাঁরা টরন্টো থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে লিন্ডসে শহরের একটি কটেজে পৌঁছান। দুপুর ২টার দিকে, ক্যাপ্টেন গুড্ডু, তাঁর বন্ধু ও বন্ধুর পুত্র একটি ক্যানুতে চেপে শান্ত জলরাশিতে যাত্রা করেন। ক্যানু হলো একটি হালকা, সরু নৌকা যা সাধারণত নদী, হ্রদ এবং শান্ত জলপ্রবাহে ব্যবহৃত হয়।
তাঁর স্ত্রী ও ছোট মেয়ে তীর থেকে সেই দৃশ্য মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করছিলেন। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করেই ক্যানু উল্টে যায়। বন্ধুর ছেলে কোনোভাবে তীরে ফিরতে সক্ষম হলেও ক্যাপ্টেন গুড্ডু ও তাঁর বন্ধু পানির নিচে তলিয়ে যান। উদ্ধারকারী দল পরে তাদের উদ্ধার করলেও তারা আর বেঁচে ছিলেন না।
শোকাহত পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব
কানাডার মিসিসাউগা শহরে বসবাসরত ক্যাপ্টেন গুড্ডুর কাজিন ফাহমিদা টনি জানান, তিনি অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ পাইলট ছিলেন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এক কর্মকর্তার সন্তান হিসেবে তিনি শৃঙ্খলাবদ্ধ পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন, যা তাঁকে আত্মবিশ্বাসী ও দায়িত্বশীল করে তুলেছে।
লিন্ডসে শহর তার শান্ত পরিবেশ ও জলক্রীড়ার জন্য জনপ্রিয়। এমন দুর্ঘটনা এখানে বিরল। হঠাৎ প্রবল বাতাস, লাইফ জ্যাকেট না পরা এবং ক্যানু চালানোর অভিজ্ঞতার অভাব – এই বিষয়গুলো দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশের প্রতিবেদন
অন্টারিও প্রাদেশিক পুলিশ (OPP) নিশ্চিত করেছে যে কাওয়ার্থা লেকস অঞ্চলের স্টার্জন লেক-এ ক্যানু দুর্ঘটনায় দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। জরুরি সেবাদাতা দল দুপুর ৩টার কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
পুলিশ জানায়, ক্যানুতে তিন ব্যক্তি ছিলেন – একজন তীরে ফিরতে পেরেছিলেন, কিন্তু বাকিরা পানিতে তলিয়ে যান। তিনজনের কেউই লাইফ জ্যাকেট পরেননি।
একজন দক্ষ পাইলটের করুণ বিদায়
যে মানুষটি হাজারো যাত্রীকে নিরাপদে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন, আজ তিনি আর নেই। তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের সামনে ঘটে যাওয়া এই ট্র্যাজেডি তাদের জীবনে এক অপূরণীয় শোকের অধ্যায় হয়ে থাকবে।
একটি শান্ত বিকেল অপ্রত্যাশিতভাবে গভীর বেদনার গল্প লিখে দিয়ে গেল – প্রকৃতি ও মানব জীবন, জল ও ভাগ্য যেন এক অনাকাঙ্ক্ষিত কান্নার স্রোতে মিশে গেল।আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং তাঁর শোকাহত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।