বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ভারতকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ কি পায়ে পাড়া দিয়ে, গায়ে ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশের সাথে ঝামেলা বাজাতে চায়? প্রতিদিন বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে ২০,২৫, ৪০জন করে বিদেশি নাগরিক বলে বাংলাদেশে পুশ ইন করছে। আমি সরকারকে বলবো, আপনারা এর কড়া জবাব দিবেন।
তিনি শনিবার বিকেলে গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা কলেজ মাঠে জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নতুন সদস্য সংগ্রহের ফরম বিতরণ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সময়ে আপনারা তো পুশ ইন করেননি। গতকালকেও (শুক্রবার) ৪৪ জনকে পুশ ইন করেছে। এদের মধ্যে ভারতের কার্ড আছে- এরকম চার-পাঁচজনকে আমাদের বিজিবি ধরেছে। কেন এই পুশ ইন করেছেন? যাদের পুশইন করছেন তারা সব ভারতের লোক।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, একটি পতাকা আছে, স্বাধীন ভূখণ্ড আছে, শক্তিশালী সার্বভৌমত্ব আছে। এদেশের মানুষ জুলাই সৃষ্টি করতে পারে, আগস্ট সৃষ্টি করতে পারে। এদেশের তারুণদের রক্ত প্রতিরোধ করতে জানে। এ রক্ত ৭১, ৯০, ৭ নভেম্বর সৃষ্টি করেছে। আজকের দিল্লির প্রভুরা এটা ভুলে গেছে। এদেশের ১৮ কোটি মানুষ প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ করতে জানে। তাই তাদের আমি হুশিয়ার করে দিতে চাই এভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অগ্রাহ্য করে, অশ্রদ্ধা দেখিয়ে আপনারা যদি পুশ ইন অব্যাহত রাখেন, এর দায় দায়িত্ব আপনাদেরকেই নিতে হবে।
রিজভী বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের লন্ডনের বৈঠক কেন জানি মনে হয়েছে কারো কারো মনে জ¦ালা ধরিয়েছে। অনেকেই এটা মেনে নিতে পারছেন না। কেন এই জ্বালা আপনাদের। আপনাদের উদ্দেশ্য কি? আজকে আমাদের কিছু রাজনৈতিক বন্ধু উষ্মা প্রকাশ করেছেন, লন্ডনের বৈঠকে নাকি নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন হবে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনাদের ইতিহাসটা বলেন তো দেখি, কখন আপনারা নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করেছেন? আপনারা পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন করেননি, ৭১ সালে বিরোধিতা করেছেন, ৮৬ সালে হাসিনার সাথে নির্বাচন করেছেন। ৯৫ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সাথে একসঙ্গে আন্দোলন করেছেন। ৫ আগস্ট এর পরে বললেন, আওয়ামী লীগকে মাফ করে দেবেন, ভারতের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করবেন। তাহলে আপনাদের রাজনীতিটা কিসের রাজনীতি। রাজনীতি মানেই হচ্ছে জনগণের কাছে ওয়াদা বা অঙ্গীকার। আপনাদের রাজনীতিটা ভুলে ভরা। এই ভুলে ভরা রাজনীতি আপনারা শুরু থেকেই করে আসছেন। আর বিএনপি সবসময় ইতিবাচক রাজনীতি করে আসছে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ড রক্ষার প্রশ্নে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যদি আপোষ করতেন তাহলে তাকে জেলে থাকতে হতো না। তিনি জনগণকে ছেড়ে কখনো যাননি।
এ সময় তিনি জনগণকে প্রশ্ন করে বলেন, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চের প্রায় গোটাটাই রমজান থাকবে,আর থাকবে ঈদ। এপ্রিলের ৮ তারিখ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হলে প্রার্থীরা কখন প্রচারণা চালাবেন। কখন নমিনেশন পেপার জমা দিবে, প্রচার চালাবে। সারাদিন রোজা রেখে কিভাবে এপ্রিলে নির্বাচন হওয়া সম্ভব? সম্ভব নয়। এমন একটি সময় নির্বাচন হওয়া দরকার যখন ধর্মীয় কোন অনুষ্ঠান থাকবে না, রোজা বা ঈদ থাকবে না। এ সময় নির্বাচন হওয়া উচিত। তাহলে যদি লন্ডনের বৈঠকে এটা হয় যে ফেব্রুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনটা হবে, এর মধ্যে কোন রমজান নেই ঈদ নেই, বড় কোন অনুষ্ঠান নেই। আবহাওয়া ভালো থাকে, শুকনা মৌসুম, হালকা শীত থাকে। এই সময়ে বরাবরই আন্দোলন সংগ্রাম হয়, নির্বাচন হয়, এটাই এ দেশের ঐতিহ্য। নির্বাচন কমিশন যদি সে সময় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন এর চেয়ে তো নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত হতে পারে না।
গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান, সহ- স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ডাঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব হাসান উদ্দিন সরকার, মো. মুজিবুর রহমান, ওমর ফারুক শাফিন, গাজীপুর আবু তাহের মুসল্লী, ফজলুল হক মুসুল্লী, এমদাদুল হক মুসুল্লী প্রমুখ।